করিমগঞ্জে ভুয়া দলিল তৈরির রমরমা ব্যবসা
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি আল আমিন
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ভুয়া দলিল তৈরির একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভেন্ডারদের কাছ থেকে সরকারি স্ট্যাম্প কিনে রেজিস্ট্রি অফিসের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে একের পর এক ভুয়া সহিমুড়ি দলিল তৈরি করছে তারা। এতে এলাকার প্রকৃত জমির মালিকরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। জমি ক্রেতা ও বিক্রেতারাও বিপাকে পড়েছেন।
তথ্য যাচাই করে জানা গেছে, চক্রটি সরকারি স্ট্যাম্প কিনে অন্যের দলিলের নম্বর, মৌজা, দাগ ও খতিয়ান বসিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাল দলিল তৈরি করছে। এসব ভুয়া দলিল ব্যবহার করে তারা জবরদখল ও বেচাকেনা করছে, যার ফলে প্রকৃত মালিকদের জমি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, করিমগঞ্জ উপজেলার কদিম মাইজ হাটি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম ভূঁইয়ার ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জুয়েল এ চক্রের অন্যতম সদস্য। তার বিরুদ্ধে একাধিক ভুয়া দলিল তৈরির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি পরিবারের রেজিস্ট্রিকৃত বণ্টননামা (৭২নং) দলিলের খারিজকৃত অংশকে ভিত্তি করে ১৯৮৫ সাল দেখিয়ে ৩৩০৪নং সহিমুড়ি দলিল এবং পরে ২০১০ সালে তার মেয়ের নামে আরেকটি হেবা দলিল (৫৪২নং) তৈরি করেছেন। রেজিস্ট্রি অফিসে যাচাই করে দেখা গেছে, এসব দলিলের দাতা, গ্রহীতা, মৌজা বা দাগ নম্বরের কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী হাজেরা আক্তার ও চায়না আক্তার অভিযোগ করে বলেন, তাদের জমি দখলের উদ্দেশ্যে জুয়েল এসব ভুয়া দলিল ব্যবহার করছেন এবং ইতোমধ্যে তাদের জমি এক প্রভাবশালীর কাছে বিক্রিও করেছেন। এ ঘটনায় তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর করিমগঞ্জ ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
এলাকাবাসীর দাবি, জহিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে একটি জাল-জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জড়িত। তার দলিলে জমি কিনতে মানুষ ভয়ে এগোয় না। এর আগে ভুয়া দলিল মামলায় তিনি ও তার স্ত্রী আড়াই মাস কারাভোগও করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই চক্রে উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আবদুর রউফ সরকার, বিএনপি নেতা মানিক মিয়া ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী শাহীন মিয়াসহ আরও অনেকে জড়িত।
অভিযোগের বিষয়ে জহিরুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. নাহিদ হাসান খান বলেন, “এ ধরনের জাল-জালিয়াতির বিরুদ্ধে কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”