শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল্লাহ তারেকসহ ১১ জনকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত
মহসেন জুট মিল কর্তৃপক্ষের মামলার পিবিআই এর তদন্ত প্রতিবেদন
মোঃ মামুন মোল্লা খুলনা জেলা প্রতিনিধি
ঃ খুলনা শিরোমনির শিল্পাঞ্চলের মহসেন জুট মিলের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ বিভিন্ন পাওনা পরিশোধের দাবির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় শ্রমিক নেতা সাইফুল্লাহ তারেকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মিলের মালামাল লুটের মামলা দেওয়া হয়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে। পিবিআই সরে জমিন পরিদর্শন করে বাদীর মানীত ৬ জন সাক্ষী এবং দুইজন নিরপেক্ষ সাক্ষীসহ মোট ৮ জন সাক্ষীর ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬১ ধারা এবং ফৌজদারী কার্যবিধ ১৭০(২) ধারা মোতাবেক সাক্ষী গণের সাক্ষের ভিত্তিতে পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোঃ ইকরাম হোসেন এ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেছেন। আদালত শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল্লাহ তারেকসহ ১১ জনকে অব্যাহতি দিয়েছে বন্ধ থাকা মহসেন জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক তাওহীদ উল ইসলাম বাদি হয়ে ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বেসরকারি পাট সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল্লাহ তারেকসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার প্রধান আসামি সাইফুল্লাহ তারেক বেসরকারি পাট সুতা বস্ত্রকল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় শ্রমিক নেতা হিসেবে মিল মালিকের অবৈধ অনিয়ম, শ্রমিক ঠকানোর প্রতিবাদে করে নির্যাতিত নিপীড়ীত শ্রমিকদের পক্ষ অবলম্বন করে দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে মিল মালিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন। শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলন করায় শ্রমিক নেতা সাইফুল্লাহ তারেককে শায়েস্তা করতে এবং অসহায় শ্রমিকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলা দেন মিল কর্তৃপক্ষ। আদালত মামলাটি রুজু হওয়ার পর আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন।মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক ( নিরস্ত্র) মোঃ ইকরাম হোসেনকে।
তিনি মামলা অভিযোগের বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খানু ভাবে অনুসন্ধান করে বাদীর মানীত ৬ জন সাক্ষী এবং দুইজন নিরপেক্ষ সাক্ষী সহ মোট ৮ জন সাক্ষীর ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬১ ধারা এবং ফৌজদারী কার্যবিধ ১৭০(২) ধারা মোতাবে ক সাক্ষী গণের সাক্ষের প্রকাশ্য ও গোপন তদন্তের ভিত্তিতে শ্রমিক নেতা সাইফুল্লাহ তারেকসহ যে ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃপক্ষের আনিত অভিযোগের কোন সত্যতা পিবিআই এর তদন্তে পাওয়া যায় নাই। আদালতে প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় মহসেন জুট মিলের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন ভাতা সঠিকমত দিতে পারছিলেন না। যাহার ফলে বেতন ভাতা বাবদ ২০ কোটি টাকা বকেয়া পড়িয়া যায় এবং মিলটি ২০১৩ সালের জুন মাসে মিলটি বন্ধ হইয়া যায়। তাহার পর হইতে মিলটি পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত অবস্থায় রহিয়াছে। তবে মিলের যন্ত্রপাতি বিভিন্ন মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য ৯ জন নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালাক্রমে পালন করছেন।
শ্রমিকদের পাওনা আদায়ের জন্য শ্রমিক নেতা সাইফুল্লাহ তারেক নেতৃত্ব দিয়ে আসতো। যাহার ফলে শ্রমিকদের পাওনা আদালতের লক্ষ্যে বিজ্ঞ শ্রম আদালত, খুলনাতে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশিদ আজম শ্রমিকদের পাওনার প্রায় অর্ধাংশ টাকা পরিশোধ করে। অবশিষ্ট টাকা শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা রয়েছে। উক্ত টাকা আদায়ের লক্ষ্যে মোঃ সাইফুল্লাহ তারেক অত্র মামলার অন্যান্য বিবাদীদের সাথে নিয়া শ্রমিকদের পাওনা টাকা আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখে শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং তাকে হয়রানি করতে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে শ্রমিক নেতা মোঃ সাইফুল্লাহ তারেকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে বাদির পেনাল কোডের ১৪৪/৪৪৭/৪৪৮/৩৪২/৩২৩/৪২৭/৩৭৯/৩৮০/৫০৬ ধারায় মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্তে উল্লেখিত বিবাদীগণের অপরাধ স্বপক্ষে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ ও সত্যতা পাওয়া যায় নাই।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয় অত্র মামলার বিবাদীগানের হয়রানি করার জন্য বাদী বিবাদীগনের বিরুদ্ধে অত্র মামলা দায়ের করিয়াছে বলিয়া প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হইয়াছে।
উল্লেখ্য বন্ধ থাকা মহসেন জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক তাওহীদ উল ইসলাম বাদি হয়ে ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর হাকিমের আদালতে শ্রমিক নেতা সাইফুল্লাহ তারেকসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মিলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে মিলের ভেতরে প্রবেশ করে মিলে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুট এবং ভাংচুরে এক কোটি টাকার ক্ষতি সাধনের একটি মামলা করা হয়। আদালত থেকে নির্দোশ প্রমানিত হয়ে শ্রমিক নেতা সাইফুল্লাহ তারেক বলেন সত্যের বিজয় হয়েছে আমি ন্যায় বিচার পেয়েছি।