হাওরাঞ্চলের কবি ও অধ্যাপক মহিবুর রহিম আর নেই
তিন দফা জানাজা, সাহিত্য ও সমাজের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আল আমিন
কিশোরগঞ্জের নিকলীর ছাতিরচর গ্রামের কৃতি সন্তান, হাওরাঞ্চলের গৌরব কবি ও গবেষক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইর ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মহিবুর রহিম (৫৫) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
বুধবার দিবাগত রাত ১৬ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাউতলিতে প্রথম জানাজা, পরে চিনাইর কলেজ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা এবং বিকেলে নিজ গ্রাম ছাতিরচরে তৃতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকলেও সদা প্রাণবন্ত ও হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটি ছিলেন হাওরপ্রেমী এক সাহিত্যিক। তাঁর লেখনিতে হাওরের জীবনের আনন্দ-বেদনা, সংগ্রাম ও বাস্তবতা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তিনি “হান্নান গ্রন্থ সুহৃদ সমিতি ও পাঠাগার” নামে নিজ গ্রামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল সাহিত্যের আলো ছড়ানোর প্রথম প্রয়াস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করা মহিবুর রহিম নব্বই দশকের খ্যাতিমান কবি ও গবেষক ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং একাডেমির স্থায়ী সদস্য ছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— অতিরিক্ত চোখ, হে অন্ধ তামস, অনাবাদি কবিতা, পলি মাটির অন্তর, হাওর বাংলা সহ একাধিক কাব্যগ্রন্থ ও গবেষণা বই।
ছাতিরচরের উন্নয়ন, নদীভাঙন রোধ, বৃক্ষরোপণ ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল। দূরে থেকেও গ্রাম, হাওর ও মানুষদের সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় যোগাযোগ।
তাঁর মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্য অঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
শোক প্রকাশ করেছেন—
অধ্যাপক মো. রমজান আলী, শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, কবি মোশারফ হোসেন খান, শামসুল আলম সেলিম, মো. আশরাফুল ইসলাম, মোকাররম হোসেন শোকরানা, মো. কামরুল ইসলাম, এড. বদরুল মোমেন মিঠু, আহসানুল হক জুয়েল, কবি জহির সাদাত, ড. এম. আব্দুল আজিজ, আব্দুল কাদির জুয়েল, মো. ওসমান গনি, কবি তাজ ইসলাম, মো. আজমল আহসান, মো. আলী জামশেদ, মো. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র, ভাই-বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। স্বজন-সাহিত্যপ্রেমীদের মতে, তাঁর সাহিত্য ও সমাজকর্মের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।