রাজধানীর মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাঃ ভাইরাল ভিডিওতে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড়!
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে (৪৩) পাথর দিয়ে মাথায় এবং শরীরে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি বর্বরোচিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা।
ঘটনার বিবরণঃ- প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড এলাকার ৪ নম্বর রজনী ঘোষ লেনে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙারির ব্যবসা করে আসা মো. সোহাগকে একা পেয়ে মঈনসহ ৪-৫ জন দুষ্কৃতকারী পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং তাকে উলঙ্গ করে নির্মমভাবে মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত সোহাগের বন্ধু মামুনের অভিযোগ, গত দুই-তিন মাস ধরে মঈন সোহাগের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছিল। সোহাগ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রায় দুই মাস আগে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় মঈন। এ ঘটনার পর পুলিশ জনি ও মঈন নামে দুজনকে আটক করেছে।
ভাইরাল ভিডিও এবং জনমনে ক্ষোভঃ- ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে এত এত মানুষ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কেউ সোহাগকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি, বরং অনেকে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল। এই দৃশ্য দেখে সমাজের বিবেকবান মানুষ স্তম্ভিত এবং ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এমন নৃশংস ঘটনা জনসম্মুখে ঘটল এবং কেনই বা কেউ প্রতিরোধে এগিয়ে এলো না।
বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়াঃ- ** ‘বিএনপি মুভমেন্ট পিপলস’ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “কারা করলো, কোন দলের সেটা আজ বড় কথা নয়। প্রকাশ্যে একজন নিরীহ ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। যারা করেছে, ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে তাদের বিচার হোক, দল নয় অপরাধ হোক বিচারযোগ্য। মানুষ বাঁচুক, রাজনীতি নয় হত্যা থামুক।”
** তামিমা মিম নামে আরেকজন তার স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “হ্যাঁ এটাই স্বাধীন দেশের সত্যিকারের স্বাধীন দৃশ্য! এই দেশের আদালত স্বচক্ষে এমন ভয়ঙ্কর ভাইরাল হওয়া ঘটনা সাক্ষি প্রমাণ সব কিছুর পরও এদের পক্ষে উকিল থাকবে যুক্তি তর্ক সাক্ষি প্রমাণের নাটক সাজানো হবে। এমন হিংস্র জানোয়ারদের জামিন হবে সম্মানে মুক্তি পাবে আর এই জানোয়ারগুলা বুক ফুলিয়ে হাঁটবে আর নতুন নতুন জুনিয়র জানোয়ারদের জন্ম দিবে ইন্সপায়ার করবে যেনো ফিল্মি স্টাইলে আরও ভয়ঙ্কর ভাবে কাউকে হত্যা করতে পারে। এভাবেই চলবে যুগের পর যুগ শতাব্দীর পর শতাব্দী কারণ এটা বাংলাদেশ।”
** দেশী পারভীন নামের একজন তার ফেসবুকে লিখেছেন, “আমি প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, এ কেমন বর্বরতা? বর্বরতা আর কতটুকু হারালে, মানুষের বিবেক ও মানবতা জাগ্রত হবে? আমরা একোন দেশে বসবাস করি?”
** লতিফুল ইসলাম ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করে লেখেন, ‘ভিডিওটা বীভৎস, শেয়ার করার মতো না।’
** নাজমুল ইসলাম নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী কমেন্টে লেখেন, ‘মিডফোর্টের ভিডিওটা দেখলাম। পাথর দিয়ে একটা মানুষকে কিভাবে জনসম্মুখে মাথা এবং শরীর থেতলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সুস্থ স্বাভাবিক কেউ ভিডিওটা দেখার সাহস করবে না। এ কোন জাহেলিয়াতে আছি আমরা? কাদের হাতে আমাদের দেশের ভবিষ্যত?’
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং পুলিশের বক্তব্যঃ- নিহত সোহাগের বন্ধু মামুনের অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত মঈন চকবাজার থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিল এবং তার বিরুদ্ধে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফুটপাত ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। তবে লালবাগ থানার ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাব্বি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মঈন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে্ তিনি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারেন, এটা তারা বিশ্বাস করেন না।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বিভিন্ন মিডিয়া মাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি গত বুধবারের। কয়েকজন মিলে প্রকাশ্যে একজন ব্যক্তিকে পাথর মেরে হত্যা করেন। এ ঘটনায় থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাকি আরও কয়েকজন অজ্ঞাত রয়েছে। আসামিদের মধ্যে আমরা ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা এখন রিমান্ডে আছে।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং জনসম্মুখে সংঘটিত হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের নীরবতা, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির ওপর আবারও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।