মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের দামামাঃ ইসরায়েল কি মুছে যাবে বিশ্ব মানচিত্র থেকে?
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
মধ্যপ্রাচ্য এখন এক প্রলয়ংকরী যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে! ইসরায়েল এবং ইরান সমর্থিত দেশগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। ক্রমাগত হামলা-পাল্টা হামলায় পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাতের ফলস্বরূপ ইসরায়েল পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে যেতে পারে। পারমাণবিক হামলার হুমকিতে গোটা অঞ্চল জুড়ে এক চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
বিস্তারিত বাস্তব চিত্রের বিবরণে দেখা যাচ্ছে যে, গত কয়েকদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। ইরান এবং তার মিত্র দেশগুলো, বিশেষ করে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুথি এবং ইরাক ও সিরিয়ার কিছু মিলিশিয়া গোষ্ঠী ইসরায়েলের উপর একের পর এক তীব্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য রকেট, ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে আঘাত হানছে, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলার তীব্রতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইরানের পক্ষ থেকে সরাসরি পারমাণবিক হামলার হুমকি এসেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইসরায়েলের উপর পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো তাদের সামরিক পরিকল্পনার অংশ এবং যেকোনো মুহূর্তে এই ধরনের হামলা হতে পারে। এই হুমকির ফলে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের সামরিক স্থাপনা এবং ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটিতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন যে, ইসরায়েল তার শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও নিজেদের রক্ষা করবে এবং যারা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা পারমাণবিক হামলার যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে কঠোরতম পদক্ষেপ নেবে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব জড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের ইরান ও ইসরায়েলের এই সংঘাতে, এই সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোও সরাসরি ঝুঁকিতে পড়েছে এই যুদ্ধে। সিরিয়া, ইরাক, লেবানন এবং ইয়েমেন ইতিমধ্যেই এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে এবং তাদের ভূখণ্ড হামলার শিকার হচ্ছে। এই দেশগুলো এখন বোমা আর মিসাইলের তাণ্ডবে এক আগুনের কুণ্ডলীতে পরিণত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য বিশ্বশক্তিগুলো অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে এবং উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের অনুরোধ করেছে। তবে, এই সংঘাত এতটাই গভীরে চলে গেছে যে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহলের ভবিষ্যৎ আশঙ্কা এই যে, যদি এই সংঘাত পারমাণবিক পর্যায়ে পৌঁছায়, তবে তা কেবল মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনবে। এই অঞ্চলে বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষের জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তায়। পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি দেশের মুছে যাওয়ার আশঙ্কা, এবং এর ফলস্বরূপ বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে্ যে পরিবর্তন আসবে, তা মানবজাতির জন্য এক নতুন সংকটের জন্ম দেবে।
সর্বপরি, চলমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিগত দিক বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্য এখন এক চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল এবং ইরান সমর্থিত দেশগুলোর মধ্যে চলমান এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ কী, তা বলা কঠিন। তবে, একটি বিষয় স্পষ্ট – যদি এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তার ভয়াবহ পরিণতি গোটা বিশ্বকে ভোগ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলের দ্রুত এবং কার্যকর হস্তক্ষেপই হয়তো এই মহাবিপর্যয় এড়ানোর একমাত্র উপায়।