কোরবানির উদ্দেশ্য ও গুরুত্বের গভীরতম তত্ত্বের আরও কিছু দিক।
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন এর লেখা ও সম্পাদনায়- ২য় পর্ব।
কোরবানির মূল উদ্দেশ্য কেবল একটি পশুকে আল্লাহর নামে জবাই করা নয়। এর পেছনে রয়েছে বহুবিধ আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা। আসুন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করি:
১. তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনঃ
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
“لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ ۗ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ”
“এগুলোর গোশত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এবং রক্তও না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (আল্লাহভীতি)। এভাবেই তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, তিনি তোমাদেরকে যে পথপ্রদর্শন করেছেন তার জন্য। আর সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা আল-হাজ্জ, ২২:৩৭)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের কোরবানি করা পশুর রক্ত বা মাংস চান না। তিনি চান আমাদের অন্তরের তাকওয়া বা খোদাভীতি। অর্থাৎ, আমরা একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে, তাঁর নির্দেশ পালনার্থে এই কাজটি করছি – এই অনুভূতিই মুখ্য। জাহারুল ইসলাম জীবনও তার লেখায় এই তাকওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন যখন তিনি বলছেন, “তোমার কোরবানি হইবে না দেখো হকিকতে”, যদি তা লোক দেখানো হয়।
২. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও আত্মসমর্পণঃ
কোরবানির সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর জন্য কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। এটি ছিল তাঁর পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যের এক জলন্ত প্রমাণ। আমাদের কোরবানিও হওয়া উচিত এই আনুগত্যের প্রতীক। নিজের প্রিয় সম্পদ, সময় বা এমনকি জীবনের একটি অংশ আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার মানসিকতা তৈরি করাই এর মূল লক্ষ্য।
৩. জাগতিক মোহমুক্তিঃ
মানুষের জীবনে অর্থ-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পদ-মর্যাদা ইত্যাদি অনেক কিছুই প্রিয় হয়ে ওঠে। এই প্রিয় বস্তুগুলোর প্রতি মোহ মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কোরবানি এই মোহ থেকে মুক্তি লাভের একটি অনুশীলন। যখন আমরা নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পশু কিনি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তা উৎসর্গ করি, তখন প্রিয় বস্তুর প্রতি আমাদের জাগতিক আসক্তি হ্রাস পায় এবং আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। জাহারুল ইসলাম জীবন যেমন ষড়রিপু দমনের কথা বলেছেন, তা এই জাগতিক মোহমুক্তিরই অংশ।
৪. ত্যাগ ও উৎসর্গের শিক্ষাঃ
কোরবানি আমাদেরকে ত্যাগের শিক্ষা দেয়। নিজের আরাম-আয়েশ, ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করার মানসিকতা তৈরি হয়। এই ত্যাগ কেবল কোরবানির দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নের অনুপ্রেরণা যোগায়।
৫. সামাজিক ভ্রাতৃত্ব ও সমবণ্টনঃ
যদিও কোরবানির আধ্যাত্মিক দিকটিই মুখ্য, তবে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দিকও রয়েছে। কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয় তিনটি অংশে: এক অংশ গরিব-দুঃখীদের জন্য, এক অংশ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এক অংশ নিজের পরিবারের জন্য। এর মাধ্যমে সমাজে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ কমে আসে, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়। যারা সারা বছর মাংস কেনার সামর্থ্য রাখে না, তারাও কোরবানির দিনে মাংস খাওয়ার সুযোগ পায়। এটি সামাজিক সাম্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৬. কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পদ, পরিবার – সবকিছুই তাঁর দান। কোরবানি এই নেয়ামতগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহরই পথে ব্যয় করার মাধ্যমে আমরা তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি।
৭. পশুত্বের ঊর্ধ্বে মানবতাঃ
জাহারুল ইসলাম জীবন যেমন ‘মনের পশুকে দাও কোরবানি, বনের পশুকে নই’ বলে উল্লেখ করেছেন, এটি কোরবানির এক গভীর দর্শন। আমাদের ভেতরের হিংসা, লোভ, অহংকার, কাম, ক্রোধ – এই রিপুগুলো এক অর্থে ‘পশুত্ব’। কোরবানি এই পশুত্বকে দমন করে মানবতাকে জাগিয়ে তোলার প্রতীকী রূপ। যখন আমরা একটি পশুকে কোরবানি করি, তখন আমরা শপথ নেই যে, আমরা আমাদের ভেতরের এই নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করব এবং আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলব।
আধুনিক কোরবানির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
জাহারুল ইসলাম জীবন তার লেখায় আধুনিক কোরবানির যে নাজুক চিত্র তুলে ধরেছেন, তা নিঃসন্দেহে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। লোক দেখানো আড়ম্বর, সামাজিক প্রতিপত্তি অর্জন, মাংসের হিসাব নিকাশ এবং হালাল-হারামের পরোয়া না করা – এই বিষয়গুলো কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ম্লান করে দিচ্ছে।
প্রকৃতই কোরবানির করণীয়ঃ
* তাকওয়ার অনুশীলনঃ কোরবানির আগে নিজেদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা সবচেয়ে জরুরি। এটি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হচ্ছে – এই বিষয়টি অন্তরে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করতে হবে।
* হালাল উপার্জনঃ কোরবানির পশু ক্রয়ের জন্য অবশ্যই হালাল উপার্জনের অর্থ ব্যবহার করতে হবে। হারাম উপার্জনের কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
* অহংকার ও লোক দেখানো বর্জনঃ প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বা সামাজিক প্রতিপত্তি দেখানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি পরিহার করতে হবে। এটি আল্লাহর প্রতি আমাদের ভক্তিকে কলুষিত করে।
* মনের পশু কোরবানিঃ কোরবানির পাশাপাশি নিজের ভেতরের কুপ্রবৃত্তিগুলো দমনের চেষ্টা করতে হবে। যে বছর যে রিপুকে কোরবানি দেওয়া হবে, সেই রিপুর দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
* মাংসের সঠিক ব্যবহারঃ কোরবানির মাংসের সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গরিব-দুঃখীদের মাঝে।
কোরবানি একটি মহান ইবাদত এবং আত্মশুদ্ধির এক অদ্বিতীয় সুযোগ। এর প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করে যথাযথভাবে তা পালন করার মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং নিজেদের জীবনকে আরও সুন্দর ও অর্থবহ করে তুলতে পারি।
আপনার যদি আরও নির্দিষ্ট কোনো প্রশ্ন বা আলোচনা করার মতো বিষয় থাকে, তবে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
জি, অবশ্যই। কোরবানির প্রকৃত হকিকত এবং এর বহুমুখী শিক্ষা নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে তুলে ধরা হলোঃ
কোরবানির উদ্দেশ্য ও গুরুত্বঃ কুরআন ও হাদিসের আলোকে আরও গভীর বিশ্লেষণ
কোরবানি কেবল একটি ইবাদত নয়, এটি জীবন ও জগতের প্রতি মুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রতিচ্ছবি। জাহারুল ইসলাম জীবন যেমনটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন, কোরবানির গভীরে রয়েছে আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া এবং আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের সুমহান শিক্ষা।
১. তাকওয়া অর্জনই কোরবানির মূল উদ্দেশ্যঃ
কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে বলেছেন:
** “আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না উহাদের (কুরবানীর জন্তুর) গোশত ও রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হাজ্জ, ২২:৩৭)
** এই আয়াতটি কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্যকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘তাকওয়া’ বা আল্লাহভীতি। অর্থাৎ, পশুর রক্তমাংস আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং বান্দার ভেতরের তাকওয়া, নিষ্ঠা ও ইখলাসই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এই তাকওয়া অর্জনের জন্য প্রয়োজন নিজের ভেতরের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা, যা জাহারুল ইসলাম জীবন ‘মনের পশু কোরবানি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
২. আল্লাহর নৈকট্য লাভঃ
‘কুরবান’ শব্দটি আরবি ‘ক্বুরবুন’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘নিকটবর্তী হওয়া’ বা ‘নৈকট্য লাভ করা’। কোরবানির মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করে। এই নৈকট্য কেবল পশু জবাইয়ের মাধ্যমে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করার মাধ্যমেই অর্জিত হয়। এই ‘প্রিয় বস্তু’ জাগতিক সম্পদ হতে পারে, আবার নিজের কুপ্রবৃত্তি বা খারাপ অভ্যাসও হতে পারে।
৩. আত্মশুদ্ধি ও আত্মপর্যালোচনাঃ
কোরবানি আত্মশুদ্ধির একটি অন্যতম মাধ্যম। এটি মানুষকে নিজের ভেতরের দুর্বলতা, লোভ, অহংকার, হিংসা, এবং আত্মকেন্দ্রিকতা উপলব্ধি করতে শেখায়। যেমন জাহারুল ইসলাম জীবন ষড়রিপু দমনের কথা বলেছেন, তেমনি কোরবানির মাধ্যমে আমরা নিজেদের এই রিপুগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলোকে বর্জন করার প্রতিজ্ঞা করি। প্রতি বছর একটি করে রিপুকে কোরবানির মাধ্যমে দমনের ধারণাটি আত্মিক উন্নতির এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। এটি মানুষকে ক্রমাগতভাবে একজন উন্নত ও তাকওয়াবান মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
৪. ত্যাগ ও উৎসর্গের শিক্ষাঃ
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ঘটনা ত্যাগের এক সুমহান দৃষ্টান্ত। নিজের সন্তানকে কোরবানি করতে উদ্যত হওয়া ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকা উচিত। এই ত্যাগের মানসিকতা শুধু আর্থিক কোরবানি নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ পালনে যে কোনো কষ্ট সহ্য করার প্রস্তুতিও অন্তর্ভুক্ত।
৫. সামাজিক সমতা ও ভ্রাতৃত্বঃ
কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করার নিয়মটি সামাজিক সমতা ও ভ্রাতৃত্বের এক সুন্দর উদাহরণ। এক ভাগ নিজেদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ গরীব-দুঃখীদের জন্য। এর মাধ্যমে সমাজের ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারে। এটি গরিবদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের একটি সুযোগ। শুধুমাত্র নিজের গোশত খাওয়ার জন্য কোরবানি না করে, যারা বঞ্চিত, তাদের মুখে হাসি ফোটানোও কোরবানির অন্যতম শিক্ষা।
৬. কৃতজ্ঞতা প্রকাশঃ
কোরবানি আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের যে রিজিক দিয়েছেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমরা তাঁরই নামে পশু কোরবানি করি। এটি Reminds us যে, আমাদের সবকিছুই আল্লাহর দান এবং তাঁরই মালিকানা।
৭. বিশ্বনবী (সাঃ) এর নির্দেশ ও ফজিলতঃ
নবী করীম (সাঃ) নিজেও কোরবানিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা কোরবানি দেয় না, তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি খুশি মনে সওয়াবের নিয়তে কোরবানি করে, ওই কোরবানি তার জাহান্নামে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হবে।” (তিরমিযী) এটি কোরবানির মহিমাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
আধুনিক বাস্তবতায় কোরবানির চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
জাহারুল ইসলাম জীবন যেমনটি উল্লেখ করেছেন, বর্তমান সময়ে কোরবানির এই মহৎ উদ্দেশ্যগুলো প্রায়শই লোক দেখানো বা সামাজিক প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে কোরবানির প্রকৃত হকিকত ফিরিয়ে আনতে কিছু বিষয় লক্ষণীয়ঃ
* নিয়ত শুদ্ধকরণঃ কোরবানির পূর্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়তের বিশুদ্ধতা। কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই কোরবানি করতে হবে, লোক দেখানো বা সামাজিক প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য নয়। হারাম টাকায় কেনা পশু কোরবানি দিলে তা কবুল হবে না, কারণ আল্লাহ শুধু হালাল ও পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন।
* আড়ম্বর পরিহারঃ বড়, মোটাতাজা পশু কেনার প্রতিযোগিতা বা অতিরিক্ত ব্যয় পরিহার করা উচিত। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী হালাল উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে কোরবানি করা উচিত।
* গোশত বণ্টনে সতর্কতাঃ সঠিকভাবে গোশত বণ্টন করা উচিত, বিশেষ করে দরিদ্র ও অভাবীদের মাঝে। ফ্রিজে গোশত সংরক্ষণ করাই কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
* পশুর প্রতি সদ্ব্যবহারঃ কোরবানির পশুর প্রতি জবাইয়ের পূর্ব পর্যন্ত সদ্ব্যবহার করা ইসলামের শিক্ষা। তাকে কষ্ট না দেওয়া এবং যত্ন নেওয়া উচিত।
* মনের পশু কোরবানিঃ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শারীরিক পশু কোরবানির পাশাপাশি নিজের ভেতরের পাশবিক প্রবৃত্তিকে (কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, অহংকার ইত্যাদি) কোরবানি করার দৃঢ় সংকল্প করা। এটিই আত্মশুদ্ধি ও আত্মিক উন্নতির মূল চাবিকাঠি।
কোরবানি শুধু একটি বাৎসরিক অনুষ্ঠান নয়, এটি এক জীবনব্যাপী সাধনা। এটি মানুষকে আল্লাহর প্রতি আরও বেশি নির্ভরশীল, কৃতজ্ঞ এবং আত্মনিয়ন্ত্রিত হতে শেখায়। কোরবানির এই গভীর শিক্ষাগুলো উপলব্ধি করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারলেই এই ইবাদত সত্যিকারের অর্থবহ হয়ে উঠবে।