ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকার অবমাননাঃ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকার অপমানজনক উপস্থাপনা দেখা যাওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, বিমানবন্দর এবং শপিং মলের প্রবেশপথে টাইলস অথবা ফ্লোরে এই তিনটি দেশের জাতীয় পতাকা মুদ্রিত বা স্টিকার আকারে লাগানো হয়েছে, যা জনসাধারণের পদদলিত হচ্ছে। এই দৃশ্য, আধুনিক ও ডিজিটাল গণযোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে গভীর অসন্তোষ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি অনুযায়ী, প্রতিটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা সেই রাষ্ট্রের জাতীয় সত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কোনো দেশের জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা সরাসরি সেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম অপমান। এটি শুধু একটি প্রতীককে অবজ্ঞা নয়, বরং সেই দেশের অস্তিত্ব এবং তার নাগরিকদের আত্মমর্যাদাকেও হেয় প্রতিপন্ন করার শামিল।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের কার্যকলাপ সুস্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনস (Vienna Convention on Diplomatic Relations) এবং ভিয়েনা কনভেনশন অন কনস্যুলার রিলেশনস (Vienna Convention on Consular Relations) অনুযায়ী, হোস্ট রাষ্ট্র বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতীক ও সম্মানের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে বাধ্য। কোনো রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকাকে পদদলিত করা বা অপমানজনকভাবে উপস্থাপন করা উক্ত কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থী।
এই ঘটনা শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতার জন্ম দিতে পারে। একটি দেশের জাতীয় পতাকাকে প্রকাশ্যে অপমান করাকে পরোক্ষভাবে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হিসেবেও গণ্য করা যেতে পারে, যেখানে একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করছে। এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং তা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই ধরনের আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি নেতিবাচক বার্তা বহন করছে। এটি দুটি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে। অবিলম্বে ভারত সরকারের উচিত এই ঘটনার জন্য গভীরভাবে নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করা এবং ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সাথে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর উচিত কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা ভারত সরকারকে জানানো এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে এই বিষয়টি উত্থাপন করা।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, ভারত সরকারকে অনতিবিলম্বে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে তারা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্যথায়, এই ধরনের কার্যকলাপ দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী তিক্ততার সৃষ্টি করতে পারে, যা কোনোভাবেই, কোন অঞ্চলের জন্য কল্যাণকর নয়।
পরিশেষে বলা যায়, একটি দেশের জাতীয় পতাকা শুধু এক টুকরো কাপড় নয়, এটি একটি জাতির আত্মা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। এর অবমাননা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভারত সরকারের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপই এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।