ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগ দিয়ে বিপাকে শিক্ষক।
মোঃ তারিকুল ইসলাম তুহিন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
মাগুরার শ্রীপুরে চাঁদাবাজির শিকার হয়ে। উপজেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আহ্বায়ক সোহেল মুন্সির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়ে বিপাকে পড়েছেন ফয়জুর রহমান নামে এক স্কুলশিক্ষক। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের হুমকির মুখে ওই শিক্ষকের এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চরকচুয়া মাচাভাঙ্গা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে ফয়জুর রহমান ঝিনাইদহের আবাইপুর রামসুন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিজে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলেও বিগত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তার বড় ভাই মাওলানা ময়েন উদ্দিন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এ ঘটনায় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী রাজনৈতিক পরিবার হিসেবে চিহ্নিত করে ওই শিক্ষককে চাঁদাবাজিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী জানান, ৫ আগস্টের পর ছাত্রদল নেতা সোহেল মুন্সীর নেতৃত্বে চরকচুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু হয়। সে সময় ওই গ্রামে তারই প্রতিবেশী আন্নু মোল্যা নামে দরিদ্র পরিবারের এক যুবকের কাছে তারা চাঁদা দাবি করে। রেহাই পেতে আন্নু মোল্যা স্থানীয় এক সুদে কারবারির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষক ফয়জুর প্রতিবাদ করায় তারা নাখোশ হয়। ওই ঘটনার পর থেকে নানাভাবে ওই শিক্ষককে হয়রানি করা হচ্ছে। একদিন শ্রীপুর বাজারে গেলে জোরপূর্বক তাকে বাজার থেকে বের করেও দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষকের স্ত্রী শামীম লাকনুর বলেন, ৭ এপ্রিল বিকালে সোহেল মুন্সী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার স্বামীকে শ্রীপুর মহিলা কলেজ পাড়ার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সেখানে তার হাত-মুখ বেঁধে নির্যাতন চালায়। আমার স্বামী একজন সম্মানীয় মানুষ। অথচ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী কেলেংকারী অভিযোগ তুলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে তারা ১ লাখ টাকা নিয়েছে। আরও ২ লাখ টাকা আদায় করতে তারা একটি ব্যাংক চেক নিয়ে যায়। ওই দুই লাখ টাকার জন্য সোহেল মুন্সী তার ঘনিষ্ঠ আল আমিন, রাজ্জাকসহ কয়েকজনকে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বারংবার চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামী কষ্টার্জিত ফসল পেঁয়াজ বিক্রি করে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করে, তাতেও ২ লাখ টাকা না হওয়ায় তিনি আবাদি জমি বন্ধক রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এদিকে টাকা সময় মত টাকা দিতে না পারায় ছাত্রদল নেতা সোহেল মুন্সী একের পর এক দলের বিভিন্ন লোক দিয়ে চাপ দিতে থাকে।তাই আমার স্বামী বাধ্য হয়ে গত ১৮ এপ্রিল/২৫ ইং তারিখে শ্রীপুর থানায় ছাত্রদল নেতা সোহেল মুন্সি, আলামিন, রাজ্জাক এবং শুকুর নামে চারজনের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় অভিযোগ করেন। এখন ওই অভিযোগ তুলে নিতে ছাত্রদল নেতা সোহেল মুন্সি বিএনপিসহ দলের বিভিন্ন লোকজনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে রিতীমত হুমকি দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক ফয়জুর রহমান বলেন, ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও চাহিদা অনুযায়ী আরও ২ লাখ টাকা না দিয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় তারা আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবার ও প্রান নাশের হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে এখন বাড়িতে থাকতে পারছি না। বাইরে নিরাপত্তা নেই। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো প্রতিকার পাইনি। উপরন্তু তাদের ভয়ে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সোহেল মুন্সী বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিগত সময়ে এমপি সাইফুজ্জামান শিখরের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন বাবলু নামে ছাত্রদলের এক নেতা। তিনিই আবার দলে ঢুকতে ওই শিক্ষককে দিয়ে আমার নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলাটি করিয়েছেন। আমার সঙ্গে চলাফেরা করে এমন কয়েকজন ওই শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা এবং চেক আদায় করেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।