৮ সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা : মোবাইল-ক্যামেরা ছিনতাই, ১২ জন আহত
স্টাফ রিপোর্টার কুমিল্লা জেলা
কুমিল্লার দেবীদ্বারে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া ৮ জন সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় সাংবাদিকসহ মোট ১২ জন আহত হন। হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ক্যামেরা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
আহত সাংবাদিকরা
আহতরা হলেন—
পারভেজ সরকার (দৈনিক দিনকাল)
নেছার উদ্দিন (এশিয়ান টিভি)
সোহরাব হোসেন (দৈনিক আজকের কুমিল্লা)
মো. আনোয়ার হোসেন (দৈনিক ডাক প্রতিদিন)
আবু বক্কর ছিদ্দিক (দৈনিক আমার দেশ)
জহিরুল ইসলাম মারুফ (দৈনিক কালবেলা)
মো. শাহজালাল (দৈনিক ভোরের দর্পণ)
সাইফুল ইসলাম সজিব (এটিএন এমসিএল নিউজ)
এছাড়া সাংবাদিক সোহরাব হোসেনের পিতা মো. জাকির হোসেন, মা নার্গিস বেগম, স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার এবং ছোট বোন রুমি আক্তারও হামলার শিকার হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের উটখাড়া মাজারের খাদেম মৃত আব্দুল খালেক ফকিরের স্ত্রী কমলা খাতুনের পরিবারের সাথে প্রতিবেশী সাহেববাড়ির শাহজাহানের পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর জের ধরে একাধিক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ ৯ সেপ্টেম্বর শাহজাহান তার প্রভাব খাটিয়ে কমলা খাতুন পরিবারের বসতবাড়ির একমাত্র প্রবেশ পথ দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সোহরাব হোসেন উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশে অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন মিয়াকে দেওয়া হয়।
লিটন মিয়া বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় সালিস ডাকেন। কিন্তু সালিস শুরু হওয়ার আগেই সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে অদূরে হাকিম মিয়ার চা দোকানে স্থানীয়দের সাথে কথা বলছিলেন। ঠিক সেই সময় শাহজাহান, জসিম উদ্দিন, সাগর, মজলু, বিল্লালসহ ২৫/৩০ জন অস্ত্রসজ্জিত লোক অতর্কিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়।
সাংবাদিকদের বক্তব্য
আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন—
> “আমরা সালিসের খোঁজ নিতে এসেছিলাম। চা দোকানে বসে স্থানীয়দের সাথে কথা বলছিলাম। হঠাৎ ২৫-৩০ জন এসে কোনো কথা না বলেই আমাদের উপর হামলা করে। আমাদের মারধর করে ক্যামেরা, মোবাইল ও নগদ টাকা নিয়ে যায়।”
প্রশাসনের বক্তব্য
ইউপি মেম্বার লিটন মিয়া জানান—
> “রাস্তা বন্ধের বিষয়টি নিয়ে সালিস বসানোর আগে হামলার ঘটনা ঘটে। আমি গিয়ে সাংবাদিকদের বাঁচানোর চেষ্টা করি।”
দেবীদ্বার থানার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাঈনুদ্দিন বলেন—
> “পুলিশ ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে গিয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আমাদের দাবি
এ হামলা মুক্ত গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর ভয়াবহ আঘাত। সাংবাদিক নির্যাতন কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। হামলাকারীরা প্রকাশ্য দিবালোকে সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, যা আইনের শাসনের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ।
👉 আমরা দাবি জানাই—
1. হামলাকারী শাহজাহান ও তার সহযোগীসহ সকল অপরাধীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।
2. তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
3. আহত সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের যথাযথ চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দিতে হবে।
অপরাধী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না—সবারই আইনের আওতায় আসতে হবে।