খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেন খুলে নেওয়ায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটির কাছে ভুক্তভোগীর লিখিত জবানবন্দী প্রদান

# হসপিটালের পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সাথে দেখা করলেন বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসি সংগঠন

মো মামুন মোল্লা খুলনা জেলা প্রতিনিধি

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর অক্সিজেন খুলে নেওয়ার পর রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত জবানবন্দী দিয়েছেন নিহত শেখ সাইফুল ইসলামের বড় ভাই শেখ আশরাফুল ইসলাম। গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে তদন্ত কমিটির সভাপতি মেডিসিন ইউনিট প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ শেখ মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে এ লিখিত জবানবন্দি প্রদান করেন। এ সময় তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে অনাকাংখিত মর্মান্তিক এই মৃত্যু ঘটনার বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ও তদন্ত কমিটির প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেছে বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী নামের একটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডাকে সাড়া দিয়ে তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয় নিহত সাইফুল ইসলাম বড় ভাই শেখ আশরাফুল ইসলাম। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির সভাপতির দপ্তরে লিখিত জবানবন্দী প্রদান করেন। লিখিত জবানবন্দী শেষে নিহত সাইফুল ইসলামের বড় ভাই শেখ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, আমাদের কথা স্পষ্ট বকশিশ না পেয়ে ওয়ার্ড ক্লিনার জব্বার আমার ছোট ভাইয়ের (মুমুর্ষ রোগির) অক্্িরজেন খুলে অর্থের বিনিময়ে অন্য রোগিকে দেয়। অক্্িরজের খুলে নেওয়ার ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে আমার ভাই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। আমার অসহায় মায়ের করুন আকুতিও ওয়ার্ডের ক্লিনারসহ কাহারও মন গলাতে পরিনি। ওয়ার্ডের দায়িত্বশীলদের অব্যস্থাপনা এবং দায়িত্বহীনতায় আমার ভাইকে অকালে চলে যেতে হলো। তিনি জানান, আমার ছোট ভাই একটি ছোট হোটেল চালিয়ে তার সংসার চালাত এই অনাকাংখিত মৃত্যুর ফলে মা, স্ত্রী ও ৬ বছর বয়েসি মেয়েটা পথে বসে গেলো। তিনি অসহায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি যাতে সঠিক ও ন্যায় বিচার পান তার জন্য সকলকে সহযোগিতার আহবান জানান।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলায় এবং ওয়ার্ড ক্লিনার জব্বার কর্তৃক অক্সিজেন খুলে নেয়ার পর রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক এবং গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেছে বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী নামে একটি সামাজিক সংগঠন। গতকাল দুপুরে বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী সংগঠনের সহ সভাপতি মোঃ জামাল মোড়ল, মোঃ সিরাজ উদ্দিন সেন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহাবুবুর রহমান খোকনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধি দলে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল ইসলাম ভুট্টো, নির্বাহী সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর চৌধুরী টিপু, মোঃ মেজবাহ উদ্দিন পাপ্পু, মোঃ বাপ্পি, মোঃ আবু বক্কার, মোঃ আজমল হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহাবুবুর রহমান খোকন বলেন, আমরা পরিচালক মহোদয়কে বলেছি মুমুর্ষ রোগির অক্্িরজেন খুলে নেওয়া সিন্ডিকেটের প্রধান কে, ঐ সময় কোন কোন ডাক্তার ও নার্স দায়িত্বে ছিলো তারা কি করছিল এ সকল বিষয় তদন্ত করে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া আমরা পরিচালক মহোদয়কে বলেছি ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারকে অর্থিক সহায়তা প্রদানসহ হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং পরিবশে দ্রæত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনা না হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী সকল রাজনৈতিক ও সামািজক সংগঠনকে সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসুচি নিয়ে মাঠে নামা হবে।
এ বিষয়ে জানতে তদন্ত কমিটির সভাপতি মেডিসিন ইউনিট প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ শেখ মোয়াজ্জেম হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেনি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালেও তিনি কোন সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য গত ২০ সেপ্টেম্বর সকালে যোগিপোল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খানাবাড়ী কপোতাক্ষ গ্রামের শেখ সাইফুল ইসলাম(৩৮)কে কিডনীজনিত কারণে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের মেডিসিন ইউনিট-১ এর ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে সাইফুলের শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা অক্্িরজেনের জন্য ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছোটাছুটি করে ব্যার্থ হয়। অনেক চেষ্টা করে রাতে অক্্িরজেন মেনেজ হয় কিন্তু ২১ সেপ্টেম্বর সকালে সেই অক্্িরজের ওয়ার্ডের ক্লিনার জব্বার এসে খুলে নিয়ে পার্শবর্তি অন্য একটি রোগীকে দেয়। অক্্িরজেন খুলে নেওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সাইফুল ইসলাম মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।