আস্থা-ভালোবাসায় পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল ১২ কোটি টাকার বেশি
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি আল আমিন
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক ও প্রসিদ্ধ পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে এবার উঠেছে রেকর্ড পরিমাণ দান। শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল সোয়া ৭টার দিকে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে একে একে ১৩টি দানবাক্স খোলা হয়।
গণনায় দেখা যায়, দানবাক্সগুলোতে জমা পড়েছে ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা, সঙ্গে রয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপার গহনা। এ যাবতকালের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দান। এর আগে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল চার মাস ১২ দিনে খোলা দানবাক্স থেকে পাওয়া গিয়েছিল ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা।
দানবাক্স খোলার পর টাকা ও গহনা বস্তায় ভরে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শুরু হয় দীর্ঘ সময়ের গণনা কার্যক্রম। এতে অংশ নেন পাগলা মসজিদ মাদ্রাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার ৩৪০ জন ছাত্র, ৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী এবং রূপালী ব্যাংকের ১০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সর্বমোট ৪৭০ জন অংশগ্রহণ করেন এ কাজে। পুরো কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন,
“পাগলা মসজিদে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলনই এই বিপুল দান। এই অর্থ সমাজকল্যাণ ও মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে।”
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী জানান,
“দানবাক্স খোলার সময় ও অর্থগণনার পুরো প্রক্রিয়ায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সবসময় দায়িত্বশীল।”
দানবাক্স খোলার আগে শেষ মুহূর্তেও নারী-পুরুষ এসে দান করেছেন টাকা, খাম, বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার গহনা। ভক্তদের বিশ্বাস— পাগলা মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় এবং জীবনে শান্তি আসে।
প্রবীণদের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রায় আড়াইশ বছর আগে এক আধ্যাত্মিক পুরুষ নরসুন্দা নদীতে মাদুর ভাসিয়ে এসে এই স্থানে অবস্থান নেন। মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে গড়ে ওঠে মসজিদ, যা পরবর্তীতে ‘পাগলা মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়।
আজও জনশ্রুতি আছে— এখানে দান করলে মানুষের ইচ্ছা পূর্ণ হয়। তাই সারা দেশ থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন এবং প্রতিবছর দানবাক্স খোলার খবরে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।