নাসা ও জাহারুল ইসলাম জীবনের গবেষণা: মহাকাশের শব্দময় জগৎ উন্মোচন!!
আন্তর্জাতিক নিউজ ডেক্স- নতুন উদ্ভাবনী তথ্য।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞান জগৎতে একটি প্রচলিত ধারণা ছিল যে মহাকাশ সম্পূর্ণ শব্দহীন, কারণ সেখানে শব্দের তরঙ্গ চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় বায়ুমণ্ডলের অনুপস্থিতি। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA) এবং বাংলাদেশী গবেষক জাহারুল ইসলাম জীবনের পৃথক গবেষণা এই ধারণাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে। উভয় গবেষণা থেকেই মহাকাশে এক ধরনের শব্দের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
নাসার গবেষণা: “সনিফিকেশন” প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাজাগতিক কম্পন-
নাসার বিজ্ঞানীরা শব্দের অভাবে মহাকাশে “শোনার” জন্য একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন-
যার নাম”সনিফিকেশন”(Sonification)।
এই পদ্ধতিতে, মহাজাগতিক বস্তু থেকে নির্গত চাপ তরঙ্গ এবং কম্পনগুলোকে মানুষের শ্রবণযোগ্য শব্দে রূপান্তরিত করা হয়। নাসার গবেষণা অনুযায়ী, মহাকাশের অধিকাংশ স্থান বায়ুমণ্ডলশূন্য হলেও, গ্যালাক্সি ক্লাস্টার বা বিশাল গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘে শব্দের তরঙ্গ চলাচলের উপযোগী মাধ্যম বিদ্যমান।
নাসা ২০০৩ সাল থেকে পার্সিয়াস গ্যালাক্সি ক্লাস্টার-এর কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ব্ল্যাক হোল থেকে আসা শব্দ তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত চাপ তরঙ্গ ক্লাস্টারের উত্তপ্ত গ্যাসে ঢেউ তৈরি করে, যা শব্দের মূল উৎস। নাসা এই শব্দগুলোকে মানুষের শোনার উপযোগী করে প্রকাশ করেছে, যা শুনতে অনেকটা “ভুতুড়ে গর্জন” বা “কম্পমান গুঞ্জনের” মতো মনে হয়। এই শব্দগুলো কোনো সুর বা নির্দিষ্ট কোনো গান নয়, বরং মহাজাগতিক বস্তুর তীব্র গতিশীলতার ফলে সৃষ্ট এক ধরনের কম্পন।
নাসা শুধু ব্ল্যাক হোল নয়, অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু থেকেও আসা শব্দ তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:-
* পৃথিবীর গান: পৃথিবীর রেডিয়েশন বেল্ট থেকে আসা এক ধরনের কোরাস শব্দ।
* মহাকর্ষীয় তরঙ্গ: ব্ল্যাক হোল বা নিউট্রন তারার সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট তরঙ্গ, যা মহাবিশ্বের নিজস্ব “গুঞ্জন” হিসেবে পরিচিত।
নাসার এই গবেষণা প্রমাণ করে যে মহাকাশ সম্পূর্ণ নীরব নয়, বরং সেখানেও এক ধরনের মহাজাগতিক শব্দ বিদ্যমান।
জাহারুল ইসলাম জীবনের গবেষণা: নিউটনের সূত্র এবং মহাজাগতিক গতির সংমিশ্রণ-
গবেষক জাহারুল ইসলাম জীবন তাঁর গবেষণায় নিউটনের গতি ও জড়তার সূত্রকে ভিত্তি করে মহাকাশের শব্দের একটি নতুন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, মহাকাশে উৎপন্ন হওয়া শব্দের কম্পাঙ্ক হলো বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহের দ্রুত চলমান প্রক্রিয়া, পৃথিবীর সমস্ত উৎপন্ন শব্দের ঘনীভূত রূপ এবং মহাকাশে প্রবাহমান উচ্চ গতিশীল ধূলিকণার ঝড়ের এক সম্মিলিত বহুমাত্রিক শব্দ। এই সবকিছুর সম্মিলিত প্রভাবে এক গুরুগম্ভীর ঘনীভূত শব্দিক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।
তাঁর এই ব্যাখ্যাটি মহাজাগতিক গতির সঙ্গে শব্দের উৎপত্তির একটি গভীর সম্পর্ক তুলে ধরে। তিনি আরও বলেন যে, এই শব্দগুলোর সঙ্গে মহাকর্ষীয় বিভিন্ন গ্রহাণুর দ্রুত গতিতে ছুটে চলার এবং বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে সৃষ্ট ঘনীভূত শব্দ তরঙ্গের এক ক্রনিক মিল রয়েছে।
দুই গবেষণার তাৎপর্য ও সমন্বয়ঃ-
নাসা এবং জাহারুল ইসলাম জীবনের গবেষণার পদ্ধতি ভিন্ন হলেও, উভয়ের প্রাপ্ত ফলাফলের মূল বার্তাটি একই: মহাকাশ সম্পূর্ণ নীরব নয়। নাসার “সনিফিকেশন” প্রযুক্তি মহাজাগতিক কম্পনগুলোকে শব্দে রূপান্তর করে সরাসরি প্রমাণ হাজির করেছে, আর জাহারুল ইসলাম জীবন নিউটনের গাণিতিক সূত্র ব্যবহার করে শব্দের উৎপত্তির একটি তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই দুটি গবেষণা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
এই গবেষণাগুলো এমন এক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে যখন কিছু ব্যক্তি মিথ্যা এবং মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে নাসার প্রকাশিত তথ্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন ধরনের অপ্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা প্রচার করা হচ্ছে, যা বিজ্ঞানের মূল সত্য থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানের সঠিক তথ্য প্রকাশ করা এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এই ধরনের ভুল ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নাসা এবং জাহারুল ইসলাম জীবনের এই যুগান্তকারী গবেষণা প্রমাণ করে যে মহাকাশ নীরবতার প্রতীক নয়, বরং এক কম্পমান, শব্দময় জগতের প্রতিচ্ছবি। এই গবেষণাগুলো মহাবিশ্বের রহস্য উদঘাটনে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে এবং ভবিষ্যতে আরও গভীর গবেষণার পথ খুলে দেবে।