জাতিসংঘের নামে প্রতারণা: বাংলাদেশে সক্রিয় আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্র!
বিশেষ প্রতিবেদন |জুলফিকার আলী জুলু
জুলাই ২০২৫
জাতিসংঘের লোগো, পরিচয়পত্র, ফেসবুক পেজ— সব কিছুই সাজানো। অথচ বাস্তবতা হলো, এরা এমন এক চক্র, যারা ‘মানবাধিকার’ আর ‘জাতিসংঘ’ নাম ব্যবহার করে দেশব্যাপী ভয়ংকর প্রতারণা চালাচ্ছে।
“Centre For Enforcement of Human Rights and Legal Aid (CEHRLA)”-এর নাম ও সরকারি নিবন্ধন নম্বর জাল করে গঠিত একটি সংঘবদ্ধ চক্র জাতিসংঘ, ICHR ও মানবাধিকার কমিশন এর নাম বিক্রি করে সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করছে। সংস্থার নাম, ব্যানার, লোগো, এমনকি কর্মী নিয়োগপত্র পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছে ভুয়া।
‘মানবাধিকার সংস্থা’র নামে চক্রের ভয়ানক পরিকল্পনা
এ চক্রটির ফেসবুক ভিত্তিক প্রধান ভুয়া পেজের নাম —
আন্তর্জাতিক আইন সহায়তাকারী সংস্থা
আইডি লিংক: facebook.com/share/16s2hVe2dS
এছাড়াও জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে খোলা হয়েছে একাধিক ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ:
সিলেট বিভাগীয় পেজ: facebook.com/share/1BxXE9eSx3
কিশোরগঞ্জ জেলা পেজ: facebook.com/share/1C91cxjefk
অন্যান্য ফেসবুক গ্রুপ: facebook.com/share/1EYXNvTfuB
এইসব মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের "জেলা মানবাধিকার প্রতিনিধি", "সমন্বয়কারী", এমনকি "মহাসচিব" বানানোর নাম করে অর্থ আদায় করা হয়।
চক্রের মূল হোতা তিনজন
এই প্রতারণার চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে:
1. কাজী মাহামুদুল হাসান – নিজেকে চেয়ারম্যান দাবি করে জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণের মিথ্যা দাবিও করেছেন
2. মোঃ মইনুর রশীদ – নিজেকে মহাসচিব দাবি করে বলেন, "আমার পরিবার আমেরিকায় থাকে, আমেরিকার ইশারায় বাংলাদেশ চলে"
ফেসবুক আইডি: facebook.com/share/1Aihef8Vat
3. মোঃ সোলয়মান হাওলাদার – সেনাবাহিনীর পোশাক পড়ে, ওয়াকিটকি ব্যবহার করে নিজেকে পরিচয় দেন 'Act-ERT' কর্মকর্তার মতো
ফেসবুক আইডি: facebook.com/share/19C6LzATaq
চক্রের জালিয়াতির ধরন
সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর S-1934(110)/98 অবৈধভাবে ব্যবহার
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাউন্সিলের লোগো মুদ্রণ
ভুয়া নিয়োগপত্র, ভুয়া সদস্যপদ, ভুয়া সনদপত্র প্রদান
চাকরির নিশ্চয়তার নামে টাকা নেওয়া
‘Anti-Corruption Team’, ‘Emergency Response Team’ ইত্যাদি নাম ব্যবহার
প্রশাসনের পোশাক/ওয়াকিটকি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ
নাম জেলা অভিযোগের ধরণ
অমিত তালুকদার তাহিরপুর থানায় অভিযোগ
মাহমুদুল হাসান তাহিরপুর থানায় অভিযোগ
মোঃ জুসেল ঝিনাইদহ জিডি
মাহবুবুল আলম সবুজ চকরিয়া কক্সবাজার জিডি
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী, কেউ চাকরির আশায়, কেউ মানবাধিকার কাজ করার আগ্রহে এই সংস্থায় যুক্ত হন। পরে বিভিন্ন পদে ‘নিয়োগ’ দিয়ে ৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।
CEHRLA-এর পক্ষ থেকে ৩৪টি দপ্তরে অভিযোগ
মূল সংস্থা CEHRLA (Centre For Enforcement of Human Rights and Legal Aid), যাদের রেজিস্ট্রেশন ও লোগো জাল করে এই প্রতারণা চলছে, তারা ইতোমধ্যে নিচের ব্যক্তিদের মাধ্যমে ৩৪টি সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন:
1. অমিত তালুকদার (সুনামগঞ্জ)
2. রফিকুল ইসলাম (জামালপুর)
3. মোঃ জুসেল (ঝিনাইদহ)
4. মাহবুবুল আলম সবুজ (কক্সবাজার)
5. আল-আমিন (কিশোরগঞ্জ)
6. শেখ শাহীন হোসেন (খুলনা)
7. জাহারুল ইসলাম জীবন (মেহেরপুর)
8. সৈয়দ আব্দুর রহমান (ঢাকা)
CEHRLA-এর অবস্থান
"মানবাধিকারকে ঢাল বানিয়ে যারা সাধারণ মানুষের অর্থ ও বিশ্বাস আত্মসাৎ করছে, তারা শুধু প্রতারক নয়— রাষ্ট্রবিরোধীও। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।"
— CEHRLA
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে, প্রশাসনকে অতিক্রম করে, জনগণকে প্রতারিত করে যে কেউ বড় প্রতারণা চালাতে পারে— তা যেন প্রমাণ করে দিয়েছে এই চক্রটি। এদের বিরুদ্ধে ত্বরিত আইনি ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় নজরদারি অত্যন্ত জরুরি।