স্বাধীন দেশে স্বাধীন পতাকাতলে এ কেমন বর্বরতা? মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ডঃ বিচারের দাবিতে উত্তাল দেশ!
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে (৪৩) নির্মমভাবে পাথর ও ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই নেটিজেনরা তীব্র নিন্দা ও দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে?- “স্বাধীন দেশেই উড়বে যেনো স্বাধীন পতাকা” স্লোগানের আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্যায়ের রামরাজত্ব নিয়ে।
** সকলের এখন একটাই দাবি-” দেশে সেই ছেলে কবে বড় হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”
ব্যাক্তির ছাড়া দল/সমাজ বড়, দলছাড়া জাতিবড়, জাতির ছাড়া দেশবড়।- এই মহৎ বাক্যবাণী যতদিন প্রতিটি ব্যাক্তি প্রকৃত হৃদয় দিয়ে, মনে প্রাণে বিশ্বাস ও লালন পালন করতে না পারবে, ততদিন আমাদের দেশে প্রকৃত শান্তি ও স্বাভাবিক নিয়মতান্ত্রিক নিরাপত্তা আসবে না। প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
** এক নির্মম ও অমানবিক হত্যাকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষোভঃ-
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, প্রকাশ্য দিবালোকে পাথর ও ইট দিয়ে সোহাগের মাথায় এবং শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করা হচ্ছে। এরপর মৃতপ্রায় শরীরের উপর বর্বর উল্লাস এবং নৃত্য প্রদর্শন করা হয়, যা জাহেলিয়াতি যুগের নৃশংসতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দৃশ্য সমগ্র দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে, কাঁদিয়ে তুলেছে এবং বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা দেখে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তীব্র ক্ষোভ ফুঁসে উঠে।
** প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা ও সারা দেশঃ-
সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা সহ সারা দেশ ফুঁসে উঠেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত রাতেই শাহবাগসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল বের করে। তাদের একটাই দাবি—এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে সেই ঐতিহাসিক উক্তি—”যেখানে অন্যায় দেখবে, সেখানেই রুখে দাঁড়াও—কারণ আজ চুপ থাকলেই কাল তুমি শিকার হবে।”
** দেশে ন্যায়বিচারের দাবি ও সভ্যতার সংকটঃ-
আমাদের ইতিহাস সাক্ষী, যেখানে ন্যায়ের পরিবর্তে অন্যায় রাজত্ব করেছে, সেখানে মানুষের কণ্ঠরোধ হয়েছে, স্বাধীনতার মৃত্যু ঘটেছে এবং সমাজে অন্ধকারের আধিপত্য চলছে দূরদান্ত দাপটে্। একজন অত্যাচারী শাসক যখন নিজের ক্ষমতাকে নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করে, তখন মানুষ কেবল দুর্ভোগে পড়ে না, বরং সভ্যতা ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়ায়। সত্যিকারের শাসন মানে সেবা, কিন্তু অত্যাচারী শাসন মানে মানবতা বিরোধী দমন। সোহাগের উপর এমন বর্বর হামলা এবং তাণ্ডব এই বার্তাই দেয় যে, আমরা কি সত্যিই স্বাধীন দেশে বাস করছি যেখানে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত অনিশ্চিত?
এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন ব্যক্তিকে হত্যা নয়, বরং আমাদের সমাজের মানবিকতা এবং বিচার ব্যবস্থার উপর একটি গুরুতর আঘাত। দেশের আপামর জনগণ এখন একটাই প্রত্যাশা করছে—অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে এমন নৃশংস মানবতা বিরোধী ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর প্রমাণ করে, বাংলার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জানে এবং তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বদ্ধপরিকর।