মানবিকতার দেয়াল ভেঙে তালা: তিন দিনের ভাড়ার দেরিতে মা-ছেলেকে ঘরে আটকে রাখলেন বাড়িওয়ালা!
স্টাফ রিপোর্টার: অমিত তালুকদার
সামান্য তিন দিনের বাসা ভাড়া দিতে বিলম্ব হওয়ায় দরজা বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে একটি পরিবারকে ঘরের ভেতরে আটকে রাখলেন বাড়িওয়ালা। এ ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের রায়পাড়ার ১৮ নম্বর বাসায়। চরম অমানবিক এই ঘটনার শিকার হয়েছে এক শিক্ষার্থী ও তার মা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে দেখেন দরজায় বাইরে থেকে তালা। ঘরের ভেতরে ছিলেন মঙ্গলকাটা এলাকার কলেজছাত্র ইমন বর্মন ও তার মা জবা রানী বর্মন। জানালা দিয়ে প্রতিবেশীদের জানালে পরে আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। প্রায় চার ঘণ্টা আটকে থাকার পর দুপুরে পুলিশ এসে তালা খুলে তাদের বের করে আনেন।
চার বছর ধরে ইউসুফ চৌধুরীর ওই বাড়িতে ভাড়া থাকছেন ইমন বর্মনের পরিবার। প্রতিমাসে নিয়মিত ৬ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া পরিশোধ করতেন ইমন, যিনি শহরে ঝালমুড়ি বিক্রি করে লেখাপড়া ও সংসার চালান। তবে গত জুন মাসে অর্থের অভাবে নির্ধারিত সময় ৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালা একরকম প্রতিশোধমূলক আচরণ করেন।
ভুক্তভোগী ইমন জানান, "আমরা সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু উনি গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেন। পরে মঙ্গলবার দরজায় বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে যান। আমরা খেয়ে-না খেয়ে ছিলাম। জানালা দিয়ে চিৎকার করে বিষয়টি জানালে আত্মীয়রা থানায় যান। পরে পুলিশ এসে তালা খুলে দেয়।"
ইমনের মা জবা রানী বর্মন বলেন, “সামান্য সময় চাওয়াতেই উনি এমন করলেন! আমাদের না খেয়ে আটকে রেখেছিলেন ঘরের ভেতরে।”
এ নিয়ে প্রতিবেশীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রফিকুল ইসলাম নামে এক প্রতিবেশী বলেন, “সামান্য টাকার জন্য এমন অমানবিক আচরণ কল্পনাও করা যায় না।” আরেক ভাড়াটিয়া স্বপন চন্দ্র বলেন, “এভাবে কেউ আটকে রাখলে যদি অঘটন ঘটত, দায় নিতো কে?”
ঘটনার পর বাড়িওয়ালা ইউসুফ চৌধুরী গণমাধ্যমের কাছে জানান, “ভাড়াটিয়া সময়মতো ভাড়া না দিলেও আমাকে গ্যাস-বিল দিতে হয়। তাই আমি আগেই নোটিশ দিয়েছি বাসা ছাড়ার।”
তবে বিকেল ৪টায় তিনি ইমনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসের ভাড়া মওকুফ করেন। তিনি জানান, সেপ্টেম্বর মাসে তারা অন্য বাসায় উঠবেন।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবু কালাম বলেন, “বিষয়টি জানার পর আমরা গিয়ে তালা খুলেছি। এভাবে কাউকে ঘরের ভেতর আটকে রাখা আইনসঙ্গত নয় এবং এটি চরম অমানবিক কাজ।”
প্রশ্ন উঠছে—
যেখানে একজন ছাত্র ঝালমুড়ি বিক্রি করে নিজের পড়ালেখা ও পরিবারের খরচ চালান, তার মতো একজন নিয়মিত ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত?
তিন দিনের দেরির শাস্তি কি কারো স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া?
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে, সেই জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের?