আত্মশুদ্ধি ও ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত পবিত্র মহররম মাসঃ এই মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ ইসলাম ধর্মে গভীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে!
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
ইসলামিক ক্যালেন্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস মহররম, যা অসংখ্য ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্যে মণ্ডিত। বিশেষত এই মহররম মাসের ৯ এবং ১০ তারিখ (আশুরা) মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মশুদ্ধি, স্মরণ এবং ত্যাগের এক অনন্য সুযোগ নিয়ে আসে। আজ ৯-ই মহররম, যা আগামীকাল ১০-ই মহররমের প্রস্তুতি ও স্মরণের দিন হিসেবে পালিত হচ্ছে।
ইতিহাসের পটভূমিতে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাঃ- মহররমের ১০ তারিখ, যা আশুরা নামে পরিচিত, ইসলামের ইতিহাসে এক শোকাবহ অধ্যায়ের সাক্ষী। এই দিনে (৬১ হিজরি মোতাবেক ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে) মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ শুধু ইতিহাস নয়, বরং সত্য, ন্যায় এবং ইনসাফের পক্ষে অটল থাকার এক মহা শিক্ষা। তবে, এই হৃদয়বিদারক ঘটনার আগের দিন, অর্থাৎ ৯-ই মহররম, ছিল ধৈর্যের পরীক্ষা এবং ত্যাগের প্রস্তুতি। এই দিনটি মুসলিমদের জন্য একটি স্মারক, যা কারবালার ট্র্যাজেডিকে স্মরণ করার পাশাপাশি আত্মিক উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করার সুযোগ দেয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নত ও শিক্ষাঃ- আশুরার দিনে রোজা রাখার গুরুত্ব স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, জাহিলিয়াতের যুগেও কুরাইশরা আশুরার দিন রোজা রাখত। পরবর্তীতে যখন রমজানের রোজা ফরজ হলো, তখন আশুরার রোজা ঐচ্ছিক হয়ে যায়। তবে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখতেন এবং এর গুরুত্ব বর্ণনা করতেন। মুসলিম শরীফের এক হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি, তাহলে ১০-ই মহররমের সাথে ৯-ই মহররমের রোজাও রাখব।"- (মুসলিম শরীফ)। এই হাদিস থেকে ৯-ই মহররমের রোজার গুরুত্ব সুস্পষ্ট হয়, যা আশুরার রোজার পরিপূরক হিসেবে গণ্য।
৯-ই মহররমের আমল ও আত্মশুদ্ধির সুযোগঃ- আজ ৯-ই মহররম, মুসলিমদের জন্য কিছু সুন্নাত আমল পালনের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি সাধনের এক সুবর্ণ সুযোগ। এই দিনটি ব্যক্তি জীবনে আত্মপর্যালোচনা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রেরণা যোগায়।
নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল উল্লেখ করা হলোঃ-
** ৯-ই মহররম রোজা রাখাঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত অনুসরণ করে ৯-ই মহররম রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আগামীকাল ১০-ই মহররম রোজা রাখলে এটি "দো'রোজা" হিসেবে পূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ।
** বেশি বেশি ইস্তিগফার ও দোয়াঃ এই দিনে আল্লাহর কাছে নিজেদের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) এবং দোয়া করা উচিত। এটি আত্মশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
** কুরআন তিলাওয়াত ও দরূদ শরীফ পাঠঃ পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত এবং মহানবী (সা.) এর উপর দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে আত্মিক শান্তি লাভ করা যায় এবং আল্লাহর রহমত লাভ হয়।
** পরিবার ও গরিবদের প্রতি সদয় হওয়াঃ হাদিসে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে যে, মহররমের এই দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন এবং অভাবগ্রস্তদের প্রতি সদয় ও উদার হওয়া উচিত। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক সংহতি এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস হিসেবে এই মহররম মাস আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও সুযোগের মাস। এই মাসের দিনগুলোতে আত্মশুদ্ধি, আত্মসমালোচনা এবং তাওবার মাধ্যমে নিজেকে গড়ার সময়। ইমাম হুসাইন (রা.) এর আত্মত্যাগ শুধু ইতিহাসের একটি ঘটনা নয়, এটি সত্য ও ইনসাফের পক্ষে অবিচল থাকার এক মহান শিক্ষা। এই পবিত্র মাসে আমরা নিজেদের ভেতরটা পরিষ্কার করি, অন্যায় ও জুলুমের বিপক্ষে সাহসিকতার সাথে দাঁড়ানোর শক্তি প্রার্থনা করি।
মহররমের মাসের এই পবিত্র দিনগুলো আমাদের স্মরন করিয়ে দেয় ত্যাগের মহিমা, সত্যের পথে অবিচলতা এবং ইনসাফের পক্ষে দাঁড়ানোর গুরুত্ব। আসুন, এই দিন গুলোতে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত কামনা করি এবং নিজেদের প্রকৃত সত্য ইসলামের ইতিহাস বুঝে, সত্য ইসলামের ঝান্ডা ও আদর্শিক দিকগুলো পূর্ণাঙ্গ ঈমানের সহিত বাস্তবায়নের প্রত্যয় নিয়ে, নিজ নিজ জীবনকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার অঙ্গীকার করি।