মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণঃ ইরানের প্রতিরোধ ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বিরতি।

প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।

মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে এক নাটকীয় মোড় দেখা যাচ্ছে, যেখানে ইরান তার দৃঢ় প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে যুক্তরাষ্ট্র ‘বিরতি’ চাইলেও ইরান এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে ইরান যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
ইরানের ‘শান্ত ও ঠাণ্ডা মাথার’ কৌশলঃ- বিশ্লেষকদের মতে, ইরান এককভাবে দুটি শক্তিশালী পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল) এর বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে। তাদের এই কৌশলকে ‘শান্ত ও ঠাণ্ডা মাথার’ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে, যেখানে তারা জুনিনহোর মতো ফ্রি-কিক, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো হেড, এবং মেসির মতো জাদুকরী খেলার প্রদর্শন করেছে। এমনকি নেইমারের মতো দক্ষতা দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কে ‘নকআউট’ পর্যায় থেকে বিদায় করেছে।
বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের ১১,৮২৯ কিলোমিটার দূর থেকে ইরানে পাল্টা আক্রমণ চালানোর পরের দিন ইরান কোনো আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেনি, বরং রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করেছে। তবে গতকাল রাতের ঘটনা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। ইরান অত্যন্ত সফলভাবে ঘাঁটির ইলেকট্রনিক তারগুলির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে, যা তাদের সক্ষমতার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিরতি’র পেছনের উদ্দেশ্যঃ-
যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘বিরতি’ চাওয়ার পেছনে অবশ্যই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আজ হোক, কাল হোক বা ৫০ বছর পর হোক, বাস্তবায়িত হতে পারে। তবে ইরান কারবালার ঐতিহাসিক শিক্ষা ভোলেনি। এই পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, তারা শুধু ঘুঘু দেখেছে, ঘুঘুর পাখা/ফাঁদ দেখেনি – অর্থাৎ, ইরানের সম্পূর্ণ সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল না।
ইরানের সাফল্যের রহস্যঃ- সাহসী আকাশপথ সৈনিক ও সামরিক শক্তি ইরানের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পেছনে রয়েছে তাদের অত্যন্ত সাহসী আকাশপথ সৈনিক বা স্ট্রাইকাররা। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান এই ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। ইরানের সামরিক বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ হাজার সামরিক স্ট্রাইকারকে ‘কফিনে’ করে ফেরত পাঠানো হবে, যা ইরানের স্ট্রাইকারদের ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। তারা জানে কীভাবে গোল দিতে হয়।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে, বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের যুদ্ধের মতো নয়, যেখানে গাড়ি নিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা হতো। এখনকার যুদ্ধ সম্পূর্ণভাবে আকাশপথে নিয়ন্ত্রিত।
আন্তর্জাতিক প্রশংসা ও আঞ্চলিক প্রভাবঃ-
ইরানের এই সাহসিকতার প্রশংসা বিশ্বজুড়ে হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ইয়েমেনকে একটি ‘ভদ্র দেশ’ হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, যদি ইরান মাথা নত করত, তবে যুক্তরাষ্ট্র পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিত। এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের বাদশাহর উচিত এই ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করা এবং ‘হাতে চুড়ি পরে ঘরে বসে না থাকা’।
যদি যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার পরিকল্পনা নিয়ে ‘বিরতি’র সুযোগ নেয়, তবে তারা পরাজিত হবে। কারণ ইরানে প্রবেশ করতে হলে তাদের ‘পুরো কাপ ঝাপ’ মোকাবেলা করতে হবে। ইরানের স্যাটেলাইট সাইলেন্সার ফিক্সড করা আছে, যা প্রবেশ করলেই অ্যালার্ম বাজিয়ে দেবে।
এই সমস্ত ঘটনা প্রবাহ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।