ক্রেমলিনের চরম হুঁশিয়ারিঃ খামেনিকে হত্যা মানে বিশ্বজুড়ে ‘প্যান্ডোরার বক্স’ খোলা– বৈশ্বিক উত্তেজনা তুঙ্গে!
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে লক্ষ্য করে যেকোনো ধরনের আঘাতের পরিণতি নিয়ে ক্রেমলিন এক নজিরবিহীন ও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। মস্কো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে। এই সতর্কবার্তা বিশ্বজুড়ে নতুন করে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার হত্যার হুমকির বিষয়টি সামনে আসে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা মানেই ‘প্যান্ডোরার বক্স’ খুলে দেওয়া। এরপর কী হবে, কেউ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না—না আমেরিকা, না ইসরায়েল!” তার এই মন্তব্য পশ্চিমা শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
পেসকভ আরও যোগ করেন, “রাশিয়া শুধু এর বিরোধিতা করবে না, বরং এ রকম যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে শক্ত হাতে। খামেনি আমাদের বন্ধুই নন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্যের শেষ স্তম্ভ।” রাশিয়ার এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার মধ্যে মস্কোর কৌশলগত স্বার্থ এবং তার মিত্রদের সুরক্ষায় দৃঢ় সংকল্পের ইঙ্গিত দেয়।
** মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত ও রাশিয়ার ভূমিকাঃ
সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ও উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে। ইসরায়েল-হামাস সংঘাত, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের লোহিত সাগরে হামলা, এবং ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর আঞ্চলিক তৎপরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার এমন কড়া হুঁশিয়ারি আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য এবং ভবিষ্যতে যেকোনো সম্ভাব্য সামরিক সংঘাতের গতিপথ নিয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে।
** ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ও বিশ্লেষকদের মতামতঃ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই বিবৃতি একই সাথে দুটি উদ্দেশ্য পূরণ করে। প্রথমত, এটি ইরানের প্রতি রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থনের বার্তা দেয়, যা মস্কো-তেহরান অক্ষকে আরও শক্তিশালী করবে। দ্বিতীয়ত, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য একটি স্পষ্ট রেড লাইন এঁকে দেয়, যেন তারা ইরানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রত্যক্ষ সামরিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা বোধ করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সত্যিই খামেনিকে লক্ষ্য করে কোনো হামলা হয়, তবে তার পরিণতি কল্পনাতীত হতে পারে। ইরান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আঞ্চলিক সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি সরবরাহ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। রাশিয়ার এই সতর্কবার্তা তাই শুধু একটি বিবৃতি নয়, এটি বিশ্বকে এক ভয়াবহ সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে একটি শীতল স্মরণ করিয়ে দেওয়া। বিশ্ব এখন গভীর উদ্বেগের সাথে এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের এই চাপা উত্তেজনা যেকোনো মুহূর্তে দাবানলে পরিণত হতে পারে।