রাজশাহী মোহনপুর উপজেলায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পুকুর খননের মহাউৎসব প্রশাসন নিরব
মোঃ নাসির উদ্দিন রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি
রাজশাহীতে ‘পুকুর খনন সন্ত্রাসীরা’ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে কৃষকের জমি নামমাত্র মূল্যে ইজারা বা জোর করে নিয়ে চলছে পুকুর খননের মহাযজ্ঞ। ফলে জেলাজুড়ে উজাড় হচ্ছে তিন ফসলি উর্বর কৃষিজমি। ইতোমধ্যেই জেলায় ৪০ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে। পাশাপাশি কৃষিজমিতে সৃষ্টি হচ্ছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ কারণে দেশের শস্যভাণ্ডারখ্যাত রাজশাহীতে কমছে ফসল ও সবজি উৎপাদন। এমনকি ফলের বাগান কেটেও চলছে মৎস্য চাষের লক্ষ্যে পুকুর খনন। কৃষিজমি কমার কারণে সচ্ছল কৃষক ক্রমাগত আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। খাদ্যাভাবের শঙ্কাও রয়েছে। জেলার আটটি উপজেলায়ই একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।
এর মধ্যে পবা, বাগমারা, দুর্গাপুর, তানোর, মোহনপুর এবং পুঠিয়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পুকুর খনন করা হচ্ছে। দীর্ঘ দেড় দশক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পুকুর খনন নিয়ন্ত্রণ করেছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন পুকুর খনন সিন্ডিকেট দখলে নিয়েছেন বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর মোহনপুরের তেঘরমাড়িয়া মেয়জা, যার জে.এল.নং-১৪২, আর.এস খতিয়ান নং—৯৬,৯৮, দাগ নং- যথাক্রমে ১৪০৮,১৪২০ এবং ১৪১৯ ও ১৪২১, রকম ধানী পরিমান- ৪ থেকে ৫০বিঘা জমিতে নুতন করে শুরু হয়েছে পুকুর খনন।
তেঘরমাড়িয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক, আবুল কাশেম, শহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম আবজাল হোসেন নাসিম পারভেজসহ প্রায় ৩৫ থেকে ৪০জন কৃষক বলেন, তাদের তিন ফসলি জমিতে একই গ্রামের জমির উদ্দিন এর ছেলে খোরশেদ আলম (৪২), আমির উদ্দিন এর ছেলে মামনুর রশিদ (৩৮) ও মৃত ইয়াছিন এর আমির উদ্দিন(৬০) জোর করে পুকুর খনন শুরু করেছে। এই পুকুর খনন করলে অত্র মৌজার প্রায় ১৫০ বিঘা জমি বর্ষার পানিতে ডুবে যাবে। এছাড়াও পানি নিস্কাশনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানের বরজসহ প্রায় ২০০বিঘা জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকবে বলে জানান তারা।
তারা আরো বলেন, পুকুর খননের মূল হোতা হচ্ছেন খোরশেদ আলম। অথচ তার কোন জমি ঐ মাঠে নেই। তিনি রাজশাহীর সাহেব আলী নামে এক ব্যক্তির জমি চাষ করে খেতেন। সাহেব আলী মারা যাওয়ার ঐ জমি দখলের জন্য উঠেপওে লেগেছে বলে জানান তারা। তারা আরো বলেন, খোরশেদ মোহনপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ আবু বক্কর এর আপন ভাগ্নে হওয়ায় আওয়ামী লীগের আমলেও দাপট দেখিয়ে নানা অপকর্ম করতেন। এখন আবার নব্য বিএনপি সেজে তিনি অপরের জমি দখল করে পুকুর খনন শুরু করেছেন বলে উল্লেখ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুকুর খননকারীদের মধ্যে অন্যতম খোরশেদ আলম বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। কারন তাদের জমি সেখানে নাই। আর ঐখানে বিঘা দুই জমিতে আবাদ ছাড়া কোন জমিতে আবাদ হয়না। সারা বছর পানি জমে থাকে। তিনি কারো জমি জোর করে নিয়ে পুকুর কাটা শুরু করেননি। সবার সাথে কথা বলেই শুরু করা হয়েছে। তবে এখন পুকুর কাটা বন্ধ আছে। ভেকুর গ্রøাস ভেঙ্গে দিয়েছে। আগামীতে যদি পুকুর কাটতে দেয় তাহলে তিনি কাটবেন। না হলে নাই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পুকুর খনন বিষয়ে মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমান এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ঘটনা তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগও রয়েছে। তবে ঐ স্থানে আর কোন ভাবেই পুকুর খনন করতে দেয়া হবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। কেউ জোর করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য পুকুর খননের ফলে দ্রুতহারে কমছে কৃষিজমি। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রাজশাহীতে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ হেক্টর। ২০২৪ সালে আবাদযোগ্য জমি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫৮ হেক্টর। অর্থাৎ ১৭ বছরে রাজশাহী জেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৩৬ হাজার ২২ হেক্টর। ২০২৫ সালে এসে সেটি ৪০ হাজার হেক্টর হয়েছে।