আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেমন প্রতিনিধি চাই
লেখক: মোঃ শাহজাহান বাশার
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
জাতির ভবিষ্যত নির্ধারণে একটি নির্বাচনের গুরুত্ব কতটা গভীর, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। বিশেষত জাতীয় সংসদ নির্বাচন—যেখানে নির্ধারিত হয় কে দেশ পরিচালনা করবে, কে জাতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেবে, আর কে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে। এই পটভূমিতে প্রশ্ন উঠে আসে: আমরা আসলে কেমন প্রতিনিধি চাই?
এ প্রশ্ন কেবল সাংবাদিকের নয়, কেবল ভোটারেরও নয়—এটি গোটা জাতির প্রশ্ন। আজ আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে নেতৃত্বের সংকট, নৈতিক অবক্ষয় ও দুর্নীতি আমাদের জাতীয় উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সময় এসেছে নতুন করে ভাবার—আমরা কী ধরনের নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত, এবং কেমন প্রতিনিধি হলে দেশ ও জাতি সত্যিকার অর্থে উপকৃত হবে?
✅ যে প্রতিনিধি হবেন সৎ ও স্বচ্ছ
প্রথম ও প্রধান শর্ত—সততা। একজন জনপ্রতিনিধি যদি ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে না পারেন, তবে তার কাছ থেকে জাতির উন্নয়ন আশা করা অবান্তর। দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী এবং অর্থসম্পদের অপচয় রোধে সচেষ্ট—এমন নেতৃত্বই আজ সময়ের দাবি।
✅ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ প্রতিনিধি চাই
জনগণের সমস্যা বোঝা এবং তা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য একজন প্রতিনিধির থাকা উচিত প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা। যিনি শুধু বক্তা নন, বরং কর্তা—যিনি শুধু প্রতিশ্রুতি দেন না, তা বাস্তবায়ন করতে পারেন।
✅ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন
একজন আদর্শ নেতা কখনোই একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটেন না। তিনি গণতান্ত্রিক চর্চা, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সংখ্যালঘুদের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি মৌলিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী থাকেন। তার কাছে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান, কোনো ভেদাভেদ নয়।
✅ যে নেতা দেশের ভবিষ্যতের রূপকার হবেন
একজন যোগ্য প্রতিনিধি শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবেন না, তিনি ভবিষ্যতের দিকেও দৃষ্টি রাখেন। দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন, শিক্ষা, প্রযুক্তি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও শিল্পবিপ্লবের পরিকল্পনা যার চিন্তায় থাকে, তিনিই প্রকৃত রাষ্ট্রনায়ক। তাকে থাকতে হবে দূরদর্শিতা ও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা।
✅ ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা ও ন্যায়বোধে বিশ্বাসী
এখানে বলতেই হয়, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ ও চার খলিফার শাসনব্যবস্থা আজও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। সেই শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে একজন প্রতিনিধি যদি আল্লাহভীরু হন, জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল হন, নিজের দায়িত্বকে আমানত মনে করেন—তবে তাতে সমাজ উপকৃত হবে, রাষ্ট্র উপকৃত হবে।
✅ যে নেতা হবেন জনগণের অভিভাবক, না যে প্রভু
রাজনীতি কোনো ব্যবসা নয়, বরং জনগণের সেবা করার একটি পবিত্র মাধ্যম। একজন প্রকৃত নেতা কখনোই নিজেকে জনগণের উপর বসিয়ে দেখেন না, বরং নিজেকে জনগণের কর্মচারী হিসেবে মনে করেন। তিনি সাধারণ মানুষের দরজায় যান, তাদের পাশে থাকেন, কান দেন তাদের কণ্ঠে।
✅ রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত, জনগণের প্রতি মমত্ববোধ থাকবে
একজন প্রতিনিধিকে অবশ্যই থাকতে হবে রাষ্ট্রের প্রতি নিষ্ঠা, আনুগত্য এবং দেশের সর্বসাধারণের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে তিনি দেশমাতৃকার প্রকৃত সন্তান।
জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে কেবল অবকাঠামো নয়, নেতৃত্বের গুণগত মানের উপর। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন নেতৃত্ব চাই, যিনি হবেন সততার প্রতীক, দক্ষতার দৃষ্টান্ত এবং ন্যায়ের রক্ষক। যিনি রাষ্ট্রকে পরিচালিত করবেন জনগণের স্বার্থে, এবং ইসলামি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে।
আমাদের প্রত্যাশা, দেশের সচেতন ভোটাররা আগামী নির্বাচনে এমন প্রার্থীকে বেছে নেবেন, যিনি কেবল প্রার্থী নন, একজন আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক হবেন।