নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও জাল সনদঃ মেধাবীরা হচ্ছে বঞ্চিত, দেশের মেরুদণ্ড যাচ্ছে ক্ষয়ে, দেশের জন্যে যাহা মহা অশনি সংকেত !
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
গত দেড় থেকে দুই দশকে বাংলাদেশের সরকারি, বেসরকারি, উন্নয়ন কর্পোরেশন, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এবং স্বশাসিত / স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সার্টিফিকেট অর্জন করে বহু অযোগ্য ব্যক্তি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। একটি গোপন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে এই জাল সনদপত্রগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা সৎ, যোগ্য এবং মেধাবী তরুণদের বঞ্চিত করে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অধিকাংশ সচেতন ও দেশপ্রেমিক জনগণ মনে করেন, এই বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সরকারের নীতিনির্ধারণী কমিটির নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্রঃ
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। যোগ্যতা ও মেধার পরিবর্তে ক্ষমতায়নে রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব, ব্যক্তিগত প্রভাব, স্বজনপ্রীতি এবং আর্থিক লেনদেন নিয়োগের মূল মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নকল সনদপত্রের ব্যবহার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একটি শক্তিশালী চক্র অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে দিচ্ছে। এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বহু অযোগ্য ব্যক্তি সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন, যা একদিকে যেমন যোগ্যদের বঞ্চিত করছে, তেমনি অন্যদিকে দেশের প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
জাল সনদের সিন্ডিকেট ও এর প্রভাবঃ
এই নকল সনদপত্রের সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে এই জাল সনদের ব্যবহার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, এবং প্রশাসনের উচ্চপদেও অযোগ্য ব্যক্তিরা স্থান করে নিচ্ছেন, যা জনসেবার মান কমিয়ে দিচ্ছে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমনকি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার মতো মৌলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অযোগ্য শিক্ষকরা নিয়োগ পাচ্ছেন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার ভিত্তিকেই নড়বড়ে করে দিচ্ছে।
মেধাবীদের বঞ্চনা ও হতাশাঃ
যখন যোগ্য ও মেধাবী তরুণরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করছেন, তখন তাদের সামনেই অর্থের বিনিময়ে জাল সনদধারী অযোগ্য ব্যক্তিরা ভালো পদে আসীন হচ্ছেন। এই বাস্তবতা দেশের মেধাবী তরুণদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি করছে। অনেকেই মনে করছেন, মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন না হওয়ায় তারা দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যা “ব্রেন ড্রেন” বা মেধা পাচারের একটি বড় কারণ। এর ফলে দেশ তার প্রকৃত মেধাবী সম্পদ হারাচ্ছে।
দেশের সার্বিক সংস্কারে জরুরি পদক্ষেপঃ
দেশের সচেতন মহল মনে করে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের জরুরি ভিত্তিতে কিছু কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছেঃ
** ১. ব্যাপক তদন্ত ও অভিযানঃ জাল সনদপত্র প্রদানকারী সিন্ডিকেট এবং এই সনদপত্র ব্যবহার করে চাকুরী গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভিত্তিক তদন্ত ও অভিযান পরিচালনা করা।
** ২. আইনের কঠোর প্রয়োগঃ জাল সনদপত্র প্রস্তুত ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন করা।
** ৩. ডিজিটাল যাচাই প্রক্রিয়াঃ সকল শিক্ষা সনদপত্র ডিজিটালাইজড করা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল যাচাই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা।
** ৪. স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিঃ সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
** ৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধিঃ জাল সনদপত্রের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং এ বিষয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য সহজ মাধ্যম তৈরি করা।
দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য এই সমস্যাটির সমাধান অত্যন্ত জরুরি। মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে দেশ সত্যিকার অর্থেই এগিয়ে যাবে। সচেতন দেশপ্রেমিক জনগণের দাবি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করবে।