রাজশাহীতে নাবিল গ্রুপের ভেজাল আটা ও চালে ভোক্তাদের প্রতারণার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে নামকরা খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপ-এর বিরুদ্ধে ভেজাল আটা ও চাল বাজারজাত করার অভিযোগে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। চকচকে আকর্ষণীয় বস্তায় প্যাকেটজাত “নাবা” ব্র্যান্ডের আটা ও চাল কিনে প্রতারিত হচ্ছেন তারা।
ভোক্তাদের অভিযোগ:
সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, নাবিল গ্রুপের আটা দিয়ে রুটি তৈরি করা যায় না। রুটি তৈরি করতে গেলে তা আঠালো হয়ে যায়, সহজেই ফেটে যায় এবং খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে।
স্থানীয় গৃহিণী ময়না খাতুন জানান,“নাবিলের নাবা আটা দিয়ে রুটি বানানোর পর দেখি একদম ভেজা ভেজা হয়ে যায়। রুটি ভাঙে যায়, কোনোভাবেই ভালো করে হয় না। খেতেও অদ্ভুত গন্ধ লাগে।”
আরেক ভোক্তা মুক্ত খাতুন বলেন,“চালটা দেখতে যেমন চকচকে, রান্না করার পর তেমনই বাজে। ভাত লালচে হয়ে যায়, আর গন্ধটা এমন যে খেতে রুচে না। এটা নিশ্চিতভাবে ভেজাল।”
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য:
এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী শহরের একটি মুদি দোকানের মালিক সোহেল রানা-র সঙ্গে। তিনি বলেন,“আমরা এসব পণ্য পাই হোলসেল ডিলারের কাছ থেকে। প্যাকেটের বাইরের চেহারা দেখে ভালো মনে হয়, তাই বিক্রি করি। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকজন ক্রেতা ফেরত দিয়ে অভিযোগ করেছে। আমরাও এখন সতর্ক হচ্ছি।”
আরেকজন পাইকারি ব্যবসায়ী জানান,“নাবিল ব্র্যান্ড বড় নাম, কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু চালান নিয়ে আমরাও সন্দিহান। ক্রেতারা ক্ষুব্ধ, আমরাও সমস্যায় পড়ছি।”
প্রশাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ:
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“আমরা ইতিমধ্যে কিছু মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এখন লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা বাজার অভিযান চালিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করব এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। জনসাধারণকে পণ্যের গুণগত মান যাচাই করে কিনতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
খাদ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মেসবাহুল আলম বলেন,“আটা ও চাল যদি সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না হয়, অথবা পুরনো ও নিম্নমানের উপাদান মেশানো হয়, তাহলে এর গুণগত মান নষ্ট হয় এবং স্বাদ-গন্ধেও তার প্রতিফলন ঘটে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সাবধানতা ও পরামর্শ:
ভোক্তাদের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন পণ্যের প্যাকেট ও লেভেল ভালো করে পড়ে কিনেন এবং সমস্যাজনক পণ্য পেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানান।
এ বিষয়ে নাবিল গ্রুপের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।