গণঅভ্যুত্থানে সশস্ত্র হামলার অভিযোগে ফুলপুরে ছাত্রলীগ নেতা ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ কর্মী আটক,
ফয়জুর রহমান, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুরে গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে সশস্ত্র হামলার ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার
অভিযোগে ফুলপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দেবাশিষ তালুকদার শুভ এবং রূপসী ইউনিয়নের খাসকান্দা গ্রামের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ কর্মী আজিজুল ইসলামকে স্থানীয় ছাত্র-জনতা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। এই হামলায় সাইফুল নামে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে দেশব্যাপী সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সময় শুভ ও আজিজুলের নেতৃত্বে ফুলপুরে একটি মিছিলে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় ছাত্র-জনতার মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফুলপুর উপজেলা সদরে দেবাশিষ তালুকদার শুভ ও আজিজুল ইসলামকে দেখতে পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা তাদের ঘিরে ফেলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ছাত্রনেতারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে তাদের দুজনকে উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
আটককৃত দেবাশিষ তালুকদার শুভ উপজেলা ছাত্রলীগের একজন প্রাক্তন সভাপতি এবং আজিজুল ইসলাম রূপসী ইউনিয়নের খাসকান্দা গ্রামের একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা গত বছর গণঅভ্যুত্থানের মিছিলে সরাসরি সশস্ত্র হামলায় অংশ নিয়েছিলেন, যাতে সাইফুল নামের একজন নিহত হন এবং আরও অনেকে গুরুতর আহত হন।
ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাদী এই আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা দেবাশিষ তালুকদার শুভ ও আজিজুল ইসলামকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে হামলার এবং একজন নিহতের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে এবং তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কোনো শীর্ষ নেতা তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেননি। তবে দলের একটি অংশ মনে করছে, যদি তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে দলীয়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ছাত্র-জনতার হাতে দুই অভিযুক্ত নেতা আটকের পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যারা গত বছর নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে একজন মানুষের প্রাণ নিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ফুলপুর থানা পুলিশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছে।
উল্লেখ্য, গত বছর কোটা বৈষম্য, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, রাজনৈতিক সংকট এবং অন্যান্য জাতীয় ইস্যুতে দেশব্যাপী গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। সেই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফুলপুরের এই ঘটনা সেই সময়েরই একটি ভয়াবহ চিত্র, যেখানে একজন নিরীহ কৃষক প্রাণ হারান। এখন দেখার বিষয়, পুলিশি তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার আরও কত তথ্য উঠে আসে এবং অভিযুক্তদের শেষ পর্যন্ত কী শাস্তি হয়।