পৃথিবী সৃষ্টি
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন
خلق السموت بغير بحمد ترؤنها والقى فى الارض رواسى ان تميد بكم وبث فيها من كل دابة وانزلنا من السماء ماء فانبتنا فيها من كل زوج كريم
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি গোলাম মাওলা
তিনি আকাশ সমুহ সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ছাড়াই যা তোমরা দেখতে পাও। তিনিপৃথিবীতে পাহাড় গেড়ে দিয়েছেন, যাতে তা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে। তিনি সব ধরনের জীব-জন্তু পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমি আকাশ থেকে, পানি বর্ষণ করি এবং জমিতে নানা ধরণের উত্তম জিনিস উৎপন্ন করি।(সূরা লোকমান-১০)
He has created the heavens without any pillaars. That you see and has set on the earth firm mountains lest it should shake with you, and he has scattered therein moving (living) creatures of all kinds. And we send down water (rain) from the sky, and we cause (plants) of every goodly kind to grow therein. (Sura lokman-10)
এখানে তিনি বলতে আল্লাহ্ তায়ালাকে বুঝিয়েছেন উপরের প্রস্তাবনা ও শুরুতে যে বাক্য গুলোর অবতারণা করা হয়েছে। তার আসল বক্তব্য হলো শিরক খন্ডন করে তাওহীদের বা একত্ববাদের দাওয়াত দেবার জন্য বক্তব্য পেশ করা হয়েছে এখানে দুটি কথা হচ্ছে তাহার দুটি মানে হতে পারে তার একটি হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই দেখছো স্তম্ভ ছাড়াই তা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, এমন সব স্তম্ভের উপর সেগুলো প্রতিষ্ঠিত যা চোখে দেখা যায় না । ইবনে আব্বাস রা; ও মুজাহিদ্র; এ দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন । আবার মুফাসসিরগনের অন্য একটি দল এর প্রথম অর্থটি নেন। বর্তমান যুগের পদার্থ বিদ্যার দৃষ্টিতে যদি এর অর্থ বর্ণনা করা হয় তাহলে বলা যেতে পারে , সমগ্র আকাশ জগতেও সীমা-সংখ্যাহীন বিশাল গ্রহ-নক্ষত্র পুঞ্জকে যার যার গতিপথে অদৃশ্য স্তম্ভের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে । কোন তারের সাহায্য তাদের পরস্পরকে সংযুক্ত করে রাখা হয়নি । কোন পেরেকের সাহায্যে তাদের একটির অন্যটির ওপর উলটে পড়ে
2
যাওয়াকে ঠেকিয়ে রাখা হয়নি। একমাত্র মাধ্যাকর্ষণ শক্তিই এ ব্যবস্থাকে সচল রেখেছে আমাদের আজকের জ্ঞানের ভিত্তিতে এটিই হতে পারে আমাদের ব্যাখ্যা। হতে পারে আগামীকাল আমাদের জ্ঞান আরো কিছু বেড়ে যেতে পারে। তখন এর আরো কোন বেশি মানানসই ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
والقى فى الارض رواسى ان ثميد بكم وانهر وسبلل لعلكم تهتدون
তিনি পৃথিবীতে পাহাড় সমুহ গেড়ে দিয়েছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে হেলে না পড়ে । তিনি নদী প্রবাহিত করেছেন এবং প্রাকৃতিক পথ নির্মাণ করেছেন যাতে তোমরা গন্তব্যে পৌছাতে পার। (সূরা নাহল-১৫)
And he has affixed in to the earth mountains standing firm, lest it should shake with you, and rivers and roads, that, you may guide yourselves. (Sura Nahal-15)
ভূপৃষ্ঠে পর্বত শ্রেণি স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে এর ফলে পৃথিবীর আবর্তন ও গতি সুষ্ঠু সুশৃংখল হয়। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের এ উপকারিতা সুস্পষ্ঠ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।এ থেকে আমরা বুঝতে পারি পাহাড়ের অন্য যে সমস্ত উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌন। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময়ে পৃথিবীকে আন্দোলিত হুওয়া থেকে রক্ষা করারই ভূপৃষ্ঠের পাহাড় স্থাপন করার মূখ্য উদ্দেশ্য নদ-নদীর সাথে যে পথ তৈরী হয়ে যেতে থাকে বিশেষ করে পার্বত্য এলাকা সমুহে এসব প্রাকৃতিক পথের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। অবশ্য সমতল ভূমিতেও এগুলোর গুরুত্ব কম নয়।(তাফহীম)
তাফসীরে ইবনে কাসীরে সূরা লুকমানে বলা হয়েছে ১০ নং আয়াতে, আল্লাহ্ তায়ালা এখানে স্বীয় ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন। যমিন, আসমানেও সমগ্র সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা তিনিই। আসমানকে তিনি কোন স্তম্ভ ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন এবং উচ্চে স্থাপন করে রেখেছেন। আসলে আকাশের কোন স্তম্ভই নেই, যদিও মুজাহিদ রঃ বলছেন যে, স্তম্ভ মানুষ দেখতে পায় না। এ প্রশ্নের পূর্ণ বিবরণ সুরায়ে রাদে (রাদ) তাফসীরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা
3
করা হযেছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিস্প্রয়োজন ধরাধামকে দৃড় করার জন্যেও নড়াচড়া করা হতে বাচাবার জন্যে তিনি এর উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। যেগুলোর সংখ্যা নিরুপন কেউ করতে পারে না। তিনি যে একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা তা বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনিই আসমান হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং এর মাধ্যমে জমি হতে সর্ব প্রকারের কল্যাণকর উদ্ভিদ তিনি উদিত করে থাকেন। এগুলো দেখতেও সুন্দর খেতেও সুস্বাদু এবং খেলে কোন ক্ষতিও হয় না বরং উপকার হয়। শাবী রঃ বলেছেন যে, যমীনের সৃষ্টিতোমাদের চোখের সামনে রয়েছে। এখন তোমরা তাকে ছাড়া যাদেরকে পূজনীয় মেনে নিয়েছো এবং পূজা করতে রয়েছো তাদের সৃষ্ট বস্তু কোথায়? তারা যখন সৃষ্টি কর্তা নয় তখন তখন তারা পূজনীয়ও হতে পারে না। সুতরাং তাদের উপসনা করা চরম অন্যায় ও অবিচার নয় কি? প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর সাথে শিকারীদের অপেক্ষা বড় অন্ধ, বধির, অজ্ঞান এবং নির্বোধ আর কে আছে? (ইবনে কাসীর)
খলিফা/প্রতিনিধি সৃষ্টি
واذ قل ربك للملئكة انى جاعل فى الارض خليفة قلوا اتجعل فيها من يفسد فيها ويسفك الدماء ونحن نسبح بحمدك ونقدس لك قال انى اعلم مالا تعلمون
আবার সেই সময়ের কথা একটু স্বরন কর যখন তোমাদের রব ফেরেশতাদের বলেছিলেন, আমি পৃথিবীতে একজন খলিফা বা প্রতিনিধি নিযুক্ত করতে চাই। তারা বললো, আপনি পৃথিবীতে এমন কাঊকে নিযুক্ত করতে চান যে সেখানকার ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্ত করবে এবং রক্তপাত করবে? আপনার প্রশংসা ও স্ততিসহকারে তাসবীহ পাঠ
এবং আপনার পবিত্র বর্ণনা তো আমরা করেই যাচ্ছি। আল্লাহ্ বললেন, আমি জানি যা তোমরা জানো না। (সূরা বাকারা-৩০)
And (remember) when your lord said to the angels: verily. I am going to place (mankind) generations after generations on earth. They said: will you place there in those who will make mischief
4
therein and shed blood. While we glorify you with prises and thanks (Exalted) be you above all that they associate with you as
(partners) and sanctify you. He (Allah) said: I know that which you do not know.
যে ব্যক্তি কারো অধিকারের আওতাধীনে তারই অর্পিত ক্ষমতা ইখতিয়ার ব্যবহার করে তাকে খলিফা বলে। খলিফা নিজে মালিক নয় বরং আসল মালিকের প্রতিনিধি। সে নিজে ক্ষমতার অধিকারী নয় বরং মালিক তাকে ক্ষমতার অধিকার দান করেছেন, তাই সে ক্ষমতার ব্যবহার করে। সে নিজের ইচ্ছামত কাজ করার অধিকার রাখে না। বরং মালিকের ইচ্ছা পূরণ করাই হয় তার কাজ যদি সে নিজেকে মালিক মনে করে বসে এবং তার উপর অর্পিত ক্ষমতাকে নিজের ইচ্ছা মত ব্যবহার করতে থাকে অথবা আসল মালিককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে নিবে তারই ইচ্ছা পূরণ করতে এবং তার নির্দেশ পালন করতে থাকে তাহলে এগুলো সবই বিদ্রোহ ও বিশ্বাস ঘাতকতা হিসেবে গন্য হবে।
ফেরেশতাদের ব্যাপারে যে কথাটা বলা হয়েছে এটা ফেরেশতাদের আপত্তি ছিলো না। বরং এটা ছিলো তাদের জিজ্ঞাসা। আল্লাহ্র কোন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করার অধিকারই ফেরেশদের ছিলো না। খলিফা শব্দটি থেকে তারা অবশ্যি এতটুকু বুঝতে পেরেছিলো যে, পরিকল্পনায় উল্লিখিত সৃষ্টজীবকে, দুনিয়ায় কিছু ক্ষমতা – ইখতিয়ার দান করা হবে তবে বিশ্বজাহানের এ বিশাল সাম্রাজ্য আল্লাহ্র একচ্ছত্র কর্তৃত্বের আওতাধীনে কোন স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টজীব কিভাবে অবস্থান করতে পারে একথা তারা বুঝতে পারছিলেন না। এই সাম্রাজ্যের কোন অংশে কাউকে যদি সামান্য কিছু স্বাধীন ক্ষমতা দান করা হয় তাহলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা বিপর্যয়ের হাত থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে, একথা তারা বুঝতে চাইছিলো। এরপর যাহা বলা হয়েছে যে, ফেরেশতারা একথা বলতে চায়নি যে, খিলাফাত তাদেরকে দেয়া হোক কারণ তারাই এর হক্বদার। বরং বক্তব্যের অর্থ ছিলোঃ হে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ ! আপনার হুকুম পালন করা হচ্ছে।আপনার মহান ইচ্ছা অনুযায়ী সমস্ত বিশ্ব-জাহানকে আমরা পাক পবিত্র করে রাখছি। আর এই সাথে আপনার প্রশংসা গীত গাওয়া ও স্তব-স্ততি করা হচ্ছে। আমরা আপনার খাদেমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার তাসবীহ পড়ছি তাহলে এখন আর কিসের অভাব থেকে যায়? একজন খলিফার প্রয়োজন দেখা দিলো কেন? এর কারণ আমরা বুঝতে পারছি না।
5
তাসবীহ শব্দটির দুটি অর্থ হয়। এর একটি অর্থ যেমন পবিত্রতা বর্ণনা করা হয় তেমনি অন্য একটি অর্থ হয় তৎপরতার সাথে কাজ করা এবং মনোযোগ সহকারে প্রচেষ্টা চালানো। ঠিক এভাবেই তাকদীস শব্দটিরও দুই অর্থ হয়। এক. পবিত্রতার প্রকাশ ও বর্ণনা এবং দুই পাক-পবিত্র করা। ফেরেশতাদের আরেকটি সন্দেহের জবাব। বলা হয়েছে, খলিফা নিযুক্ত করার কারণ ও প্রয়োজন আমি জানি, তোমরা নিজেদের যে সমস্ত কাজের কথা বলেছো, সেগুলো যথেষ্ট নয়। বরং এর চাইতেও বেশি আরো কিছু আমি চাই। তাই পৃথিবীতে ক্ষমতা- এখতিয়ার সম্পন্ন একটি জীব সৃষ্টি করার সংকল্প গ্রহন করা হয়েছে।
হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টি
যেহেতু আদম আঃ হল মানব জাতীর পিতা সেহেতু হাওয়া আঃ হল মানব জাতির মা। কুরআন কোন ধরণের কিতাব? এটি কিভাবে অবতীর্ণ হলো? এর বিষয় বস্তু ও আলোচ্য বিষয় কি? কোন কেন্দ্রিয় বিষয় বস্তুর সাথে এর অসংখ্য বিভিন্ন পর্যায়ের বিষয়াবলী সম্পর্কিত? নিচের বক্তব্য উপস্থাপন পদ্ধতি ও স্বপ্রমাণ করার জন্য এতে কোন ধরণের বর্ণনা ধারা ও যুক্তি–প্রমাণ পদ্ধতি অবলম্বিত হয়েছে? এই প্রশ্ন গুলোর এবং এই ধরণের আরো কিছু প্রয়োজনীয় প্রশ্নের সু-স্পষ্ট জবাব যদি পাঠক শুরুতেই পেয়ে যান তাহলে তিনি বহুবিধ আশংকা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। তার জন্য কুরআনের অর্থ অনুধাবন ও তার মধ্যে চিন্তা-চেতনা, গবেষণা করার পথ প্রশস্ত হ্যে যেতে পারে। যে ব্যক্তি কুরআন মাজিদের প্রচলিত গ্রন্থের ন্যায় রচনা বিন্যাসের সন্ধান করেন এবং এর পাতায় তার সাক্ষাৎ না পেয়ে চতুর্দিকে হাতড়াতে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়েন, কুরআন জানা না থাকাই তার মানসিক অস্থিরতার মূল কারণ।
বিশ্ব জাহানের মালিক সর্ব শক্তিমান আল্লাহ্ মানব জাতিকে পৃথিবীতে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মানব জাতীর দুই সদস্য হযরত আদম আঃ ও হযরত হাওয়া আঃ প্রথম গ্রুপকে তিনি পৃথিবীতে জীবন যাপন করার জন্য বিধান দান করেন। গোটা মানব জাতির প্রতিনিধি হিসেবে তাকে সাজদাহ্ করানো হয়েছে।
হযরত আদম আলাই হিস সালাম সম্পর্কে কিছু কথা আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তুলে ধরেছেন।
ولقد خلقنكم ثم صورتكم ثم قلنا للملئكة اسجدوا لادم ط فسجدوا الا ابليس- لم يكن من السجدين
6
অর্থাৎ আমিই তোমাদের কে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে রুপ দান করেছি, তারপর আমি ফেরেশতাদের কে নির্দেশ দিয়েছি তোমরা আদমকে সাজদাহ্ কর। তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সাজদাহ্ করল, যারা সাজদাহ্ করল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হল না। (সূরা আরাফ আয়াত-১১)
And surely, we created you (Your father Adam) and then gave you shape (the nobel shape of a human being), then we told the angels, prostrated to Adam, and they prostrated, except Iblis (Satan), he refused to be of those who prostrate.
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে-
واذ قال ربك للملئكة انى خالق بشرا من صلصال من حما مسنون-
অর্থাৎ- তারপর তখনকার কথা স্বরণ করো যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, আমি শুকনো ঠন ঠনে পচাঁ মাটি থেকে একটি মানুষ সৃষ্টি করছি। (সূরা আল হিজর আয়াত-২৮)
And (Remember) when your lord said to the angels: I am going to create a man (Adam) from sounding clay of altered black smooth mud.
فاذا سويته ونفخت فيه من روحى فقعوا له سجدين
অর্থাৎ- যখন আমি তাকে পূর্ণ অবয়ব দান করবো এবং তার মধ্যে আমার রুহ্ থেকে কিছু ফুকে দেবো তখন তোমরা সবাই তার সামনে সিজদাবনত হইয়ো। সূরা আল হিজর আয়াত-২৯
So, when I have fashioned him completely and breathed in to him (Adam) the soul which i created for him, Then fall (you) down prostrating yuorsslves unto him.
হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর কিছু কথা, কেননা তিনি হলেন সর্ব প্রথম মানব জাতীর পিতা তিনি। আর এ কারণে আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে তিনি বলেন-
7
و علم ادم الاسماء كلما ثم عرضهم على الملئكة فقال انبئونى باثماء هؤلاء ان كنتم صدقين
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ কে সমস্ত জিনিসের নাম শেখালেন তারপর সেগুলো পেশ করলেন ফেরেশতাদের সামনে এবনং বললেন যদি তোমাদের ধারনা সঠিক হয় (অর্থাৎ কোন প্রতিনিধি নিযুক্ত করলে ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হবে) তাহলে একটু বলতো দেখি জিনিসগুলোর নাম। (সূরা আল-বাকারা-৩১)
And he tought Adam all the names (of everything ) then. He showed them to the angels and said. Tell me the names of these if you are truthful.
হযরত আদম (আঃ) ও ইবলীসের ঘটনা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
واذ قلنا للملئكة اسجدوا لادم فسجدوا الا ابليس
স্বরণ কর সে সময়ের কথা যখন আমি ফেরেশতাদের কে বলেছিলাম, আদম (আঃ) কে সিজদাহ্ করো, তারা সবাই সিজদাহ্ করলো কিন্তু একমাত্র ইবলীস অস্বীকার করলো। (সূরা আত ত্বহা-১১৬)
And (remember) when we said to the angels: Prostrate yourselves to Adam, They prostrated (all) except Iblis (satan) who refused.
হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (আঃ) এই দুই জনের বেহেশ্তে বসবাসের ফলাফল।যাহা আল্লাহ্ তায়ালা
কালামে পাকে এইভাবে বলেছেন-
قال ربنا ظلمنا انفسنا-وان لم تغفرلنا وترحمنا لنكونن من الخسرين
তারা দুই জনে বলে উঠলোঃ ′হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। এখন যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না কর এবং আমাদের প্রতি রহম না করো, তাহলে নিঃসন্দেহে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো“। (সূরা আল আরাফ-২৩)
8
They said: Our Lord! We have wronged ourselves. If you forgive us not, and bestow not upon us your mercy. We shall certainly be of the losers.
সকল মানুষ হযরত আদম আঃ এর সন্তান আমরা আমাদের মা-বাবা, আমাদের সন্তানরা তাদের সন্তান আমাদের সকলের পিতা ও মাতা। তাই আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সাবধান করেছেন কুরআনে-
الم اعهد الىيكم يبنى ادم ان لا تعبدوا الشيطن انه لكم عدو مبين
হে আদম আঃ সন্তানেরা! আমি কি তোমাদের এ মর্মে হিদায়েত করিনি যে, শয়তানের বন্দেগী করোনা, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা ইয়াসিন-৬০)
Did I not ordain for you, o children of Adam, that you should not worship shaitan (Satan). Verily, he is a plain enemy to you.
1
And we have enjoined on man (to be dutiful and good) to his parents. His mother bore him in weakness and hard ship upon weakness and hard ship, and his weaning is in two years give thanks to me and to your parents, unto me is the final destination.
শিশুর দুধপান করার মেয়াদ ২ দুই বছরে পূর্ণ হয়ে যায়। এ মেয়াদ কালে কোন শিশু যদি কোন স্ত্রীলোকের দুধপান করে তাহলে দুধপান করার ′হুরমাত“ অর্থাৎ দুধপান করার কারণে স্ত্রীলোকটি তার মায়ের মর্যাদায় উন্নীত হয়ে যাওয়া এবং তার জন্য তার সাথে বিবাহ্ হারাম হয়ে যাওয়া প্রমানিত হয়ে যাবে। এখানে ঈমাম শাফেয়ী রঃ, ঈমাম আহমাদ রঃ, ঈমাম আবু ইউছুফ রঃ ও ঈমাম মুহাম্মাদ রঃ এ অর্থ গ্রহণ করেছেন। অন্যথায় পরবর্তি কালে কোনো প্রকার দুধপান করার ফলে কোন ′হুরমাত“ প্রতিষ্ঠিত হবে না।
এ উক্তির স্বপক্ষে ঈমাম মালেকের রঃ ও একটি বর্ণনা রয়েছে।কিন্তু আবু হানিফা রঃ অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার উদ্দেশ্যে এ মেয়াদকে বাড়িয়ে আড়াই বছর করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই সঙ্গে ঈমাম সাহেব এ কথাও বলেন, যদি ২ দুই বছর বা তার চেয়ে কম সময়ে শিশুর দুধ ছাড়িয়ে দেয়া হয় এবং খাদ্যের ব্যাপারে শিশু কেবল দুধের উপর নির্ভরশীল না থাকে, তাহলে এরপর কোন স্ত্রীলোকের দুধপান করার ফলে কোন দুধপান জনিত হুরমাত প্রমানিত না। তবে যদি শিশুর আসল খাদ্য দুধই হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য খাদ্য কম বেশি কিছু খেয়ে নিলেও এ সময়ের মধ্যে দুধপানের কারণে হুরমাত হয়ে যাবে। কারণ শিশুকে অপরিহার্যভাবে ২ দুই বছরেই দুধপান করাতে হবে। আয়াতের উদ্দেশ্য এটা নয়। সূরা বাকারায় আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন-
′মায়েরা শিশুদেরকে পুরো ২ দুই বছর দুধপান করাবে, তার জন্য যে দুধ পান করার মেয়াদ পূর্ণ করতে চায়।“ আল- বাকারা-২৩৩ আয়াত।
2
′The mothers shall give suck to their children for two whole yours.“
ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন এবং ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে তার সাথে একমত হয়েছেন, যে গর্ভধারণের সর্বনিম্ন মেয়াদ ছয় মাস। কারণ কুরআনের অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
“তার পেটের মধ্যে অবস্থান করা ও দুধ দেওয়ার কাজ ৩০ ত্রিশ মাস। আল-আহকাফ-১৫ আয়াত।
And the bearing of him, and the weaning of him is thirty 30 manths.
এটি একটি সুক্ষ্ম আইনগত বিধান এবং এর ফলে বৈধ ও অবৈধ গর্ভের অনেক বিতর্কের অবসান ঘটে।
একই সূরায় আল্লাহ্ তায়ালা আরো বিস্তারিতভাবে বলেছেন-
3
“আমি মানুষকে এই মর্মে নির্দেশনা দিয়েছি যে তারা যেন পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করে। তার মা তাকে কষ্ট করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছিলো এবং কষ্ট করেই তাকে প্রসব করেছিলো। তাকে গর্ভে ধারণ ও দুধপান করাতে ৩০ ত্রিশ মাস লেগেছে। এমন কি যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌছেছে এবং তারপর চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়েছে তখন বলেছে”- হে আমার রব তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে সব নিয়ামাত দান করেছো আমাকে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দাও। আর এমন সৎ কাজ করার তাওফিক দাও যা তুমি পছন্দ করো। আমার সন্তানদেরকে সৎ বানিয়ে আমাকে সুখ দাও। আমি তোমার কাছে তাওবা করছি। আমি নির্দেশের অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত”। সূরা- আহকাফ-১৫ আয়াত।
And we have enjoined on man to be dutiful and kind to his parents. His mother bears him with hard ship and she brings him forth with hardship, and the bearing of him, and the weaning of him is thirty (30) months years, till when he attains full strength and reaches forty years. He says: my lord! Grant me the power and ability that I may be gratefull for your favour which
you have bestowed upon me and upon my parents, and that I may do righteous good deeds, such as please you, and make my off-spring good truly, I have turned to you in repentance, and truly. I am one of the muslims (submitting your will).
এখানে আল্লাহ্ তায়ালার একত্ববাদ, আন্তরিকতার সাথে তার ইবাদাত এবং ওর প্রতি অটলতার হুকুম ছিলো বলে এখানে পিতা-মাতার হক আদায় করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এই বিষয়েরই আরো বহু আয়াত কুরআনে পাকের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
4
“তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত করবেনা এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলনা এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করনা; তাদের সাথে কথা বল সম্মানসূচক নম্রভাবে। সূরা বনী-ইসরাইল-২২ আয়াত।
“And your lord has decreed that you worship none but him. And that you be dutiful to to your parents. If one of them or both of them attain old age in your life, say not to them a word of disrespect, nor shout at them but address themo in terms of honour.”
একই ভাবে অন্য সূরার আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
“আর প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি। তার মা দূর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারন করে এবং দু-বছর লাগে তার দুধ ছাড়াতে এজন্য আমি তাকে
5
উপদেশ দিয়েছি আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আর আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে। সূরা- লোকমান-১৪ আয়াত।
“And we have enjoined on man (to be dutiful and good) to his parents. His mother bore him in weakness and hard ship upon weakness and hard ship, and his weaning is in two years give thanks to me and to your parents, unto me is the final destination”.
এই বিষয়ে আরো অনেক আয়াত আছে। এখানে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন-
“আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি” সূরা লোকমান-১৪ আয়াত।
“And we have enjoined on man (to be dutiful and good) to his parents”.
হযরত সাদ রাঃ হতে বর্ণিত যে, তার মাতা তাকে বলেঃ “ আল্লাহ্ তায়ালা পিতা-মাতার আনুগত্য করার নির্দেশ কি দেননি? জেনে রেখ যে, আমি পানাহার করবো না যে পর্যন্ত না তুমি আল্লাহ্র সাথে কুফরী করব্বে। হযরত সাদ রাঃ এতে অস্বীকৃতি জানালে তার মাতা তাই করে অর্থাৎ পানাহার সম্পূর্ণরুপে পরিত্যাগ করে। শেষ পর্যন্ত লাঠি দ্বারা তার মুখ ফেড়ে জোর পূর্বক তার মুখে খাদ্য ও পানীয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তখন উক্ত আয়াতটি নাজিল হয়।