পাঠানোর নামে প্রতারণা: সৌদি আরবে বিপাকে হাজারো বাংলাদেশি যুবক-যুবতী
বিশেষ প্রতিবেদক:মো: সেলিম রানা সৌদি প্রবাসী
বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ থেকে হাজারো যুবক-যুবতী পাড়ি জমাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে সৌদি আরবে। তবে এই স্বপ্ন যাত্রা অনেক সময়ই দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে—কারণ দেশে গড়ে ওঠা অসংখ্য অবৈধ ও প্রতারক এজেন্সির ফাঁদে পা দিয়ে তারা পড়ছেন চরম বিপদে।
ঢাকার পুরানা পল্টন ও আশেপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহীন ম্যানপাওয়ার এজেন্সি। এসব প্রতিষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আকর্ষণীয় চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে সহজ-সরল মানুষকে প্রলোভিত করে। চাকরির অফার, আকর্ষণীয় বেতন, থাকা-খাওয়ার সুবিধা ইত্যাদি দেখিয়ে টাকা নেয়া হয়, কিন্তু সৌদিতে গিয়ে দেখা যায় পুরোটা ছিল সাজানো প্রতারণা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দেশে থাকা দালাল চক্র ও এজেন্সিগুলো একাধিকবার ‘বিক্রি’ করে বিদেশে পাঠায়। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের আটক করে রাখা হয় নির্দিষ্ট ‘ক্যাম্প’-এ, যেখানে প্রতিদিন ১৫০-র বেশি মানুষ গাদাগাদি করে থাকে। খাবার হিসেবে এক টুকরো রুটি ছাড়া কিছুই দেওয়া হয় না। কোন স্বাধীনতা নেই, স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই, কাজের পরিবেশ নেই।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, যারা প্রতিবাদ করেন, তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়, ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং কখনো কখনো শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। অনেকের অভিযোগ, কফিল বা কোম্পানির চুক্তিপত্র ভুয়া, যে ফোন নম্বর বা ঠিকানা দেয়া হয় তা সম্পূর্ণ জাল।
বিশেষ করে সৌদি আরবের রিয়াদ, জেদ্দা, দাম্মাম প্রভৃতি শহরে এই ধরনের ক্যাম্প ও দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। একটি সুসংগঠিত আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশি তরুণদের নিয়ে এই ব্যবসা চলছে। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, কিছু মেয়েদেরকেও অনলাইনে ফাঁদে ফেলে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে এজেন্সিগুলো।
এই পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের পরিবার এবং ভুক্তভোগীরা বাংলাদেশ সরকার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
তারা চান ভুয়া ও অবৈধ এজেন্সির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপ।
ভুক্তভোগীদের উদ্ধার ও নিরাপদ পরিবেশে পুনর্বিন্যাস
বিদেশে অবস্থানরত দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি ব্যবস্থা।
ভবিষ্যতে প্রবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম ও তদারকি করা।
এই প্রতারণার শিকার একজন যুবক বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম একটা ভালো ভবিষ্যতের, কিন্তু এখন আমরা বন্দির মতো পড়ে আছি। কেউ কথা শুনছে না, সাহায্য করছে না।”
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে এখনই সময় এই ভয়ঙ্কর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার।