আজ আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব বা “মা”- দিবসঃ মায়ের ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি সন্তানের জন্য ত্যাগের মহিমায় স্বর্গীয় সুধা!
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
আজ ১১ মে-২০২৫ আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব বা “মা” দিবস। প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পালিত হয়। মাতৃত্বের সম্মান, মায়ের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের এই বিশেষ দিনে মুখরিত হয়ে উঠে সমগ্র বিশ্ব। মায়ের স্নেহ, মমতা আর অসীম ত্যাগ ছাড়া কোনো সন্তানেরই পৃথিবীতে আগমন ও বেড়ে ওঠা সম্ভব নয়। তাই এই দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে।
আজকের এই বিশেষ দিনে, বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে নানামূর্খী আয়োজনের মধ্য দিয়ে মায়েদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, গান, এবং মায়েদের সম্মাননা প্রদানের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্রগুলোতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
ইতিহাসের পাতা থেকে মাতৃত্ব বা মা’ দিবসের তাৎপর্যতাঃ
আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব বা মা’ দিবসের ধারণাটি প্রথম জন্ম নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অ্যানা জার্ভিস নামে এক বিদুষী নারী তাঁর মায়ের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য এই দিনটির প্রচলন করেন। ১৯০৮ সালে তিনি প্রথম ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ মেথডিস্ট চার্চে তাঁর মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে একটি বিশেষ সভার আয়োজন করেন। এরপর তিনি বিশ্বজুড়ে মাতৃত্ব বা মা’ দিবস পালনের জন্য প্রচারণা শুরু করেন।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর, ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন প্রতি বছর মে’ মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে জাতীয় মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশও এই দিনটিকে স্বীকৃতি দেয় এবং বর্তমানে এটি একটি আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব বা মা’ উৎসবে পরিণত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ভাবে মা’ দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যঃ
আন্তর্জাতিক মা’ দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়। এটি আমাদের জীবনে মায়ের অসামান্য অবদানকে স্মরণ করার এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি সুযোগ। মা’ শুধু জন্মদাত্রী নন, তিনি প্রথম শিক্ষিকা, বন্ধু এবং পথপ্রদর্শক। সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ, ধৈর্য্য এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসা অতুলনীয়।
এই বিশেষ দিনটিতে আমরা উপলব্ধি করি, মায়েরাই আমাদের জীবনের প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন। তাদের স্নেহ, মমতা আর অনুপ্রেরণাই আমাদের জীবনে এগিয়ে চলার সাহস যোগায়। মায়ের হাতের স্পর্শ, মুখের হাসি, আর মিষ্টি বকুনি—এগুলোই আমাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ।
বিশেষ বাণীতে আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব বা মা’ দিবসঃ
আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব বা মা’ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মায়েদের অসীম ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে মায়েদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা সকল মায়ের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন।
এছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক ও নারী অধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে মায়েদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কর্মজীবী মায়েদের জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি এবং সমাজে নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় স্কুল ও কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মায়ের প্রতি কবিতা ও গান পরিবেশন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দুস্থ ও অসহায় মায়েদের মাঝে বস্ত্র ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছে। অনেকে আজ মায়ের হাতে তৈরি করা পছন্দের খাবার খাচ্ছেন এবং পরিবারের সকলে মিলে মায়ের সাথে সময় কাটাচ্ছেন।
বিশ্ব মা’ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার সমূহ্ঃ
আন্তর্জাতিক মাতৃত্ব বা মা’ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক, শুধু একটি দিন নয়, বছরজুড়ে আমরা যেন মায়েদের সম্মান করি, ভালোবাসি এবং তাদের পাশে থাকি। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেই এবং তাদের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা করি। মায়েরাই আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার, তাই তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা চিরন্তন।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল- মা’, তাদের স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসায় ভরে উঠুক প্রতিটি সন্তানের মূল্যবান জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।