সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের দেশত্যাগে সহায়তাকারীদের পরিচয় প্রকাশ!
নিজস্ব প্রতিবেদক : মো: সেলিম রানা
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সম্প্রতি চিকিৎসা ও বিশ্রামের উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে এই সফর ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিরোধী মহলের দাবি, তার নামে থাকা হত্যা মামলা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ সত্ত্বেও কিভাবে তিনি নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ করলেন, তা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তোলপাড়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল হামিদের এই বিদেশ সফরের আগে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই গোয়েন্দা সংস্থা—ডিজিএফআই (Directorate General of Forces Intelligence) ও এনএসআই (National Security Intelligence)—তার বিদেশ যাত্রায় সরাসরি অনুমোদন বা অনাপত্তি (NOC) প্রদান করে। এই অনাপত্তির ভিত্তিতেই ইমিগ্রেশন ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) তাকে সহায়তা করে।
দেশত্যাগের প্রক্রিয়া: কারা ছিলেন সম্পৃক্ত
বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি ‘আলফা-১১ স্যার’ নামক এক কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।
এই ‘আলফা-১১ স্যার’ তখন বিষয়টি জানান এনএসআই-এর সহকারী পরিচালক সানাউল্লাহ নূরী এবং ডিজিএফআই-এর উইং কমান্ডার ফয়সাল-কে। তারা সরাসরি জানান যে, “এ ভ্রমণের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
এরপর পুলিশের এসবি ও ইমিগ্রেশন বিভাগ তাদের মধ্যে সমন্বয় করে আব্দুল হামিদকে বিদেশ যেতে সহায়তা করে। পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরবর্তীতে এসবি সদরদফতরে একটি লিখিত নোট পাঠানো হয়, যেখানে উল্লেখ থাকে কে অনুমতি দিয়েছে এবং কীভাবে তার যাত্রা সম্পন্ন হয়।
প্রশাসনিক প্রটোকল ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা
সূত্র মতে, প্রশাসনিকভাবে এ প্রক্রিয়ায় এসবির অ্যাডিশনাল ডিআইজি ও ডিআইজি ইমিগ্রেশন সবুজ সংকেত দেয়ার পরই তাকে নিরাপদে বিদেশ যাত্রার সুযোগ দেয়া হয়।
পালানো না চিকিৎসা সফর? জনমনে প্রশ্ন
বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্দোলন ও প্রশাসনিক সঙ্কট চলাকালে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতির এভাবে বিদেশ চলে যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
বিশেষ করে, সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলা বা তদন্ত থাকলে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, অথচ একাধিক মেয়াদে দেশের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি কীভাবে ছাড়পত্র পেলেন—এ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
বিশ্লেষকদের মত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক একটি চিকিৎসা সফর নয় বরং ‘রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় নিরাপদে প্রস্থান’। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “একজন মামলাভুক্ত ব্যক্তি কীভাবে দেশের নিরাপত্তা সংস্থার অনুমোদন পেতে পারেন?”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই ঘটনাকে সাবেক রাষ্ট্রপতির “পলায়ন” হিসেবে উল্লেখ করছেন এবং দাবি করছেন, যারা তাকে সাহায্য করেছে, তাদেরকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।