ইসরায়েলে জুড়ে ভয়াবহ দাবানলের লেলিহান আগুনঃ এযেন প্রকৃতির নীরব প্রতিশোধ?
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের পর এবার সমগ্র ইসরায়েলে ভয়াবহ দাবানলের লেলিহান আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দাবানলের তীব্রতা এতটাই বেশি যে বহু শহর জনশূন্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঘরবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কৃষিজমি—সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। আগুনের লেলিহান শিখা আকাশেও কালো ধোঁয়ার মেঘ তৈরি করেছে, যা জনমনে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
গত কয়েকদিনে দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া এই তীব্র দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। দেশটির অত্যাধুনিক নির্বাপন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। দাবানলের ভয়ংকর রূপের কাছে কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে ইসরায়েল।
এই ভয়াবহ দাবানল এমন এক সময়ে আঘাত হেনেছে, যখন ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় গত ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচারে বোমা হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছে এবং এখনো চলমান। বিমান হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গাজা ও রাফার বহু ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু।
এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ দাবানলের ঘটনা অনেককেই হতবাক করেছে। অনেকেই এই দাবানলকে ফিলিস্তিনের উপর ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের নির্বিচার হামলার ফল হিসেবে দেখছেন, আখ্যায়িত করছেন ‘প্রকৃতির নীরব প্রতিশোধ’ হিসেবে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের আহাজারির কথা উল্লেখ করে এই দাবানলকে প্রকৃতির ন্যায়বিচার হিসেবে মন্তব্য করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দাবানলের তীব্রতা এতটাই বেশি যে বহু শহর থেকে বাসিন্দারা অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ঘরবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, কৃষিজমি—সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। যদিও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে দাবানলের ব্যাপকতা তাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে এবং তারা কার্য্যত-ই ব্যর্থ হয়ে পড়েছে, যাহার কারণে ইসরাইলের জেরুজালেম সহ গুরুত্বপূর্ণ শহর ও জরুরি স্থানের অবস্থা খুবই ভয়াবহতার রূপ ধারণ করেছে। যাহার কারণে ইসরায়েল দেশটিতে জরুরী অবস্থা জারী করেছেন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাহায্যের জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়েছে ।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত দাবানলের কারণ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি। প্রাথমিকভাবে আবহাওয়ার শুষ্কতা ও উচ্চ তাপমাত্রাকে এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে এই সময়ের দাবানলের ব্যাপকতা এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অনেক প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে আবারও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। একদিকে গাজায় অব্যাহত ধ্বংসলীলা, অন্যদিকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ—এই দুটি ঘটনা একইসঙ্গে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনা হয়তো দীর্ঘদিনের সংঘাতের একটি নতুন মোড়।
তবে এই দাবানল প্রকৃতির প্রতিশোধ হোক বা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এর ফলে ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ যে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঘরহারা মানুষ, পুড়ে যাওয়া সম্পদ—সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিভাবে সাড়া দেয় এবং এই ঘটনা দীর্ঘদিনের সংঘাতের উপর কোনো প্রভাব ফেলে কিনা, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এদিকে, ইসরায়েলের জরুরী অবস্থা ঘোষণা এবং আন্তর্জাতিক সাহায্যে আহবানে সাঁড়া দিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জেরুজালেমের আগুন নেভাতে সাহায্য করার জন্য অগ্নিনির্বাপক দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও ইসরায়েল এখনো এই প্রস্তাবের কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি। তবে এর আগে ফিলিস্তিনি অগ্নিনির্বাপক দল ইসরায়েলে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে সহায়তা করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং অগ্নিনির্বাপণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
ইসরায়েলে তিব্র দাবানলে সৃষ্ট আগুনের লেলিহান শিখার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বিশ্ববাসীকে নানামুর্খী মিশ্র প্রতিক্রিয়া করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকে আল্লাহ তায়ালার ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে একটি চিরায়ত সত্য উক্তি উদ্ধৃত করছেন, "আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেন না।" ইসরায়েলের এই দাবানল সেই ন্যায়বিচারের একটি জ্বলন্ত প্রমাণ কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে। তবে এই মুহূর্তে ইসরায়েলের বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ফিলিস্তিনের উপর চলমান আগ্রাসন বন্ধের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।