৩০ বছরের চুক্তিতে চালু করা হবে মাগুরা টেক্সটাইল মিলস
মাগুরা প্রতিনিধি রাহুল ইসলাম হৃদয়
মাগুরা টেক্সটাইল মিলসে যেসব মেশিন আছে, সেগুলো অনেক পুরোনো। দরপত্রের মাধ্যমে এগুলো নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মাগুরা টেক্সটাইল মিলসের পুরোনো মেশিনপত্র দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হওয়া মাগুরা টেক্সটাইল মিলস পুনরায় চালুর উদ্যোগের অংশ হিসেবে এটি করা হচ্ছে বলে দাবি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি)। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি) মাধ্যমে কারখানাটি পুনরায় চালুর চেষ্টা করছে বিটিএমসি।
বিটিএমসির কর্মকর্তা ও কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বর্তমানে মিলে যেসব সরঞ্জাম আছে, সেগুলো অনেক পুরোনো মডেলের। প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো। এতে উৎপাদিত সুতার বাজারে চাহিদা কম। পুরোনো মেশিনের বিদ্যুৎ খরচও বেশি। এ কারণে মিলটি বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে তাই পুরোনো মেশিন ও সরঞ্জাম দরপত্রের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
গত শনিবার মাগুরা টেক্সটাইল মিলসে গিয়ে দেখা গেছে, পুরোনো সরঞ্জাম ট্রাকে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বিটিএমসি ও কারখানা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের স্ক্র্যাপ মেশিনারিজ বিক্রির জন্য গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় দরপত্র ডাকা হয়। ভ্যাট, আয়করসহ ৬ কোটি ২৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ‘মেক পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সুযোগটি পায়। সে অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে মেশিনারিজ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
কারখানাটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ বছরের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে চায় সরকার। কারখানা স্থাপন ও সংস্কারের জন্য সময় পাবেন বিনিয়োগকারী।
মাগুরা জেলার একমাত্র এই ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে মাগুরা পৌরসভার ভায়না এলাকায় মাগুরা-যশোর সড়কের পাশে ১৬ দশমিক ১৭ একর জায়গার ওপর কারখানাটি স্থাপিত হয়।
কারখানাটি করতে ব্যয় হয়েছিল ৫১ কোটি ৪৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। শুরুতে কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলে জনবল ছিলেন ৯৮৩। কারখানাটি ১৯৮৫ সালে উৎপাদনে যায়। বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন সুতা তৈরির কারখানাটি শুরুতে ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু পরে সরকারি ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে মিলটি লোকসানে পড়ে। অব্যাহত লোকসানের মুখে ১৯৯৯ সালে কারখানাটি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তখন শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো হয়। এরপরও ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে কোনোরকমে কারখানাটি চালু ছিল।
সেটাও সফল না হওয়ায় ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট কারখানাটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৯ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৭ সালে কারখানাটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয় বিটিএমসি। তারা দরপত্র ডাকে। দরপত্রে অংশ নিয়ে মেসার্স আলী ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। তবে দুই বছরের চুক্তি শেষের আগেই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
সর্বশেষ বরাদ্দ পাওয়া মেসার্স আলী ট্রেডার্সের পরিচালক মো. আলী আকবরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানায় যেসব মেশিন আছে, তা বহু বছরের পুরোনো। রোমানিয়া থেকে আনা। এগুলো মেরামতের মিস্ত্রিও পাওয়া যায় না। এখানে তৈরি সুতার বাজারে চাহিদাও নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, কারখানাটি নিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩০ বছরের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি করতে চায় সরকার। কারখানা স্থাপন ও সংস্কারের জন্য সময় পাবেন বিনিয়োগকারী। ৩০ বছর পর সরকারের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা যাবে। বিনিয়োগকারী এখানে ব্যাংকঋণ বাদে সব সুবিধাই পাবেন। কারখানাটির অবস্থান খুবই সুন্দর জায়গায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মাগুরা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে যাতায়াতের সময় কমে এসেছে। এ ছাড়া পায়রা ও মোংলা বন্দর কাছে। এর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা এখানে নিষ্কণ্টক জমি ও সস্তায় শ্রমিক সুবিধা পাবেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন শাহীন শেখ বলেন, কারখানাটি যখন চালু ছিল, এলাকার অনেকেই এখানে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বহু শ্রমিক বেকার হয়ে বসে আছেন। জেলায় কর্মসংস্থানের তেমন কোনো সুযোগ নেই। মিলটি চালু হলে অনেকেই কাজের সুযোগ পাবেন।
বিটিএমসির মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ও পিপিপি প্রকল্পসমূহের প্রকল্প পরিচালক কাজী ফিরোজ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, পিপিপির মাধ্যমে কারখানাটি পুনরায় চালুর জন্য এ পর্যন্ত তিনবার দরপত্র ডাকা হয়েছে। কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী মিলটি পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা আশা করছেন, বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেবেন, এ কারণেই মিলের স্ক্র্যাপ দরপত্রের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।