রাশিয়ার তিন যুদ্ধজাহাজের চারদিনের শুভেচ্ছা সফরঃ
বঙ্গোপসাগরে কৌশলগত বন্ধুত্বের আগাম বার্তা।
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
বন্ধুত্বের উষ্ণ বার্তা নিয়ে রাশিয়ার তিনটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ গতকাল এক শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। জাহাজ তিনটি চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে নোঙ্গর করেছে। চার দিনের এই সফর দুই দেশের নৌবাহিনী এবং সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাশিয়ার প্যাসিফিক ফ্লিটের এই যুদ্ধজাহাজ বহরে রয়েছে একটি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার, একটি বৃহৎ আকারের উভচর ল্যান্ডিং জাহাজ এবং একটি মাঝারি আকারের সমুদ্রগামী টাগবোট। জাহাজগুলোতে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র, সেন্সর এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এই ধরনের যুদ্ধজাহাজের বাংলাদেশে আগমনকে কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
জাহাজগুলো বন্দরে পৌঁছালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানান। এ সময় উভয় দেশের নৌবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে উষ্ণ করমর্দন ও কুশল বিনিময় হয়। সফরের অংশ হিসেবে রুশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও স্থাপনা পরিদর্শন করবেন। একইসাথে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তারাও রুশ জাহাজগুলো ঘুরে দেখবেন।
এই শুভেচ্ছা সফরকালে দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে পেশাগত অভিজ্ঞতা বিনিময়, যৌথ মহড়া এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সমুদ্র পথে সন্ত্রাস দমন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করার ক্ষেত্র নিয়েও উভয় পক্ষ মতবিনিময় করতে পারে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সামরিক ক্ষেত্রেও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বিদ্যমান। এই শুভেচ্ছা সফর সেই বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
যুদ্ধজাহাজগুলোর এই সফর বঙ্গোপসাগরের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন পরাশক্তির সামরিক উপস্থিতি যখন বাড়ছে, তখন রাশিয়ার এই ধরনের শুভেচ্ছা সফর আঞ্চলিক ভারসাম্যের ক্ষেত্রে একটি নতুন বার্তা দিতে পারে।
আগামী চার দিন রুশ যুদ্ধজাহাজগুলো চট্টগ্রামে অবস্থান করবে এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে। এরপর জাহাজগুলো বাংলাদেশ ত্যাগ করবে বলে জানা গেছে। এই সফর নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে এবং ভবিষ্যতে উভয় দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও প্রসারিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে।