জেলার রুকন শিক্ষা শিবির।
মানুষের তৈরী আইনের পরিবর্তে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করলেই দেশে প্রকৃত শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠত হবে।
...............অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
রামপাল সংবাদদাতা :মোহাম্মদ গোলাম মাওলা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এম,পি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাই সৃষ্টি যার আইন চলবে তার। আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা হওয়ায় সকল সৃষ্টি তার নির্ধারিত আইনেই পরিচালিত হয়। মানুষ যেহেতু আল্লাহর সৃষ্টি এ কারণে মানুষ আল্লাহর আইন দিয়েই পরিচালিত হবে। জমিন আল্লাহর আর এ জমিন ও পরিচালিত হবে আল্লাহর আইন দিয়ে। আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করলেই দেশে প্রকৃত শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র হল 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' যার অর্থই হল আল্লাহ ছাড়া কারো আইন মানি না। তিনি আরো বলেন সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর 'সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ' এ কথা জামায়াতের গঠনতন্ত্রে লিখিত থাকার কারণে বিগত ফ্যাসিবাদী ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামীলীগ সরকার জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধনকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বাতিল করেছে। তিনি অবিলম্বে জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে বাগেরহাট জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে বাগেরহাট শহরের দশানী ট্রাফিক মোড়স্থ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলানায়তনে রুকন শিক্ষা শিবির -২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি শেখ মোঃ ইউনুসের পরিচালনায় উক্ত শিক্ষা শিবিরে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা মশিউর রহমান খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। উক্ত রুকন শিক্ষা শিবিরে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা সহকারি সেক্রেটারি অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, মিজানুর রহমান মল্লিক, অ্যাডভোকেট মুস্তাইন বিল্লাহ, জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আবুবকর সিদ্দিক, অধ্যক্ষ আলতাফ হোসাইন, অধ্যাপক রেজাউল করিম, অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম, শেখ মনজুরুল হক রাহাদ, হাফেজ মোবারক হোসাইন, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা সাহিদুল আলম, এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরো বলেন, মানব রচিত আইন কখনোই মানুষকে গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। মানব রচিত আইনের অধীনেই শাসক একসময় শোষকে পরিণত হয়।যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ নিকট অতীতে আমাদের দেশেই রয়েছে।বিগত শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার ধর্ম নিরপেক্ষতার আড়ালে মুজিববাদী সংবিধানের অধীনে ফ্যাসিবাদী-স্বৈরাচারী সরকারে পরিণত হয়ে জনগণের উপর সীমাহীন জুলুম নির্যাতন কায়েম করেছিল। এ কারণেই দেশে মানুষের তৈরি আইন চলতে পারে না। তিনি আরো বলেন আমাদের দেশ আল্লাহর আইন দিয়ে পরিচালিত হবে। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে হলে তা কেবলমাত্র সংসদের মাধ্যমেই কার্যকর করা সম্ভব। এজন্য আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আল্লাহর আইনের পক্ষে জনমত গঠন করতে হবে।সংসদ নির্বাচনে আল্লাহর আইনের পক্ষে ভোট প্রদান করে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই দেশে আল্লাহর আইন চালু করা সম্ভব। তিনি আরো বলেন দেশে আল্লাহর আইন চালু না থাকায় প্রতিনিয়ত অন্যায় ও অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি শপথের আলোকে জীবন পরিচালনা করে বাতিলকে উৎখাতে জামায়াতে ইসলামের পক্ষে ব্যাপক জনমত গঠন করতে রুকনদের প্রতি আহ্বান জানান।
মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন জামায়াতে ইসলামী ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে কাজ করছে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করে আদর্শ সমাজ গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংস্কার সাধনের জন্য রুকনদেরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের পথ সব সময় বাধা-বিপত্তিতে পরিপূর্ণ।সকল রুকনগন সমাজ থেকে জুলুম ও নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে যাবে। বর্তমানে কোন গুজব ও অপপ্রচারে কান না দিয়ে ইসলামের সুমহান আদর্শকে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং ইসলামের রঙে রঙিন হয়ে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
মশিউর রহমান খান বলেন আনুগত্য ও শৃঙ্খলা হল ইসলামী আন্দোলনের প্রাণ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের পর নেতার আনুগত্য করাকে আল্লাহ তা'আলা ফরজ করে দিয়েছেন। জামায়াতের কর্মীদের আনুগত্য প্রদর্শনে সাহাবীদের মত ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের মধ্যে কোন মতবিরোধ দেখা দিলে সংগঠন নির্ধারিত পদ্ধতিতে সমাধান করে নিতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা নষ্টের মত কোন কাজে কর্মী বাহিনী কখনোই জড়িয়ে যাবে না। রুকনগন সকল ক্ষেত্রে আমানত সমূহ তাদের হকদারদের নিকট যথাযথভাবে পৌঁছে দিবে।
অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস হল যুগে যুগে এ আন্দোলনের কর্মীদের ত্যাগ ও কুরবানীর ইতিহাস। বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনামলে আমিরে জামায়াত ও সেক্রেটারি জেনারেল সহ জামায়াতের প্রথম সারির নেতারা শাহাদাতের নজরানা পেশ করে এদেশে ইসলামী আন্দোলনের পথকে আরো সুগম করেছেন। তাদের ত্যাগের পথ ধরে বাংলার জমিনে ইসলামী আন্দোলন আরো মজবুতি অর্জন করেছে। দেশে একটি সত্যিকারের ইসলামী বিপ্লব সাধনে শপথের কর্মীদের সব সময় জীবন উৎসর্গ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশ বিরোধী সকল দেশী ও বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রুকন ভাইয়েরা সাদা প্রস্তুত থাকবে।
সভাপতির বক্তৃতায় মাওলানা রেজাউল করিম বলেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে ইসলামী অনুশাসনের মাধ্যমে একটি আদর্শিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এজন্য জামায়াতের সকল জনশক্তিকে জনগণের সামনে ইসলামের সুমহন আদর্শ তুলে ধরতে হবে। একটি আদর্শ ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য সংগঠনের দাওয়াতকে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। আর এজন্যই রুকনদের এই প্রশিক্ষণের আয়োজন। একদল প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী পারে সমাজ ও রাষ্ট্রকে গঠন করতে।এজন্য রুকনগণ তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে জীবন ও সম্পদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমে সচেষ্ট থাকবে।#
তাং- ১৯/০৪/২৫।