ভারতে প্রতিনিয়ত মুসলিম বিদ্বেষী নানামুখী কার্যকলাপ, বিশ্ব শান্তির জন্য মারাত্মক হুমকি!
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
ইসলাম অর্থ শান্তি এবং ইসলামী জীবনদর্শন শান্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। এই শান্তির বার্তা বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়াই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। তবে সাম্প্রতিককালে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলাম ও মুসলিম সম্প্রদায় বিদ্বেষ ও অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে। বিশেষত, ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী কর্তৃক মুসলিমদের প্রতি ক্রমবর্ধমান ঘৃণা ও সহিংসতা বিশ্ব শান্তির জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পবিত্র কোরআনের শিক্ষা ও মানবতার মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এই বিদ্বেষপূর্ণ কার্যকলাপ শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে।
ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর মুসলিম বিদ্বেষী নানামুর্খী মনোভাব ও আক্রমণাত্মক কার্যকলাপঃ ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দু সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মগুরু ও রাজনৈতিক নেতারা দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম ও ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য ও কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। তাদের এই বিদ্বেষ জাতিগত ও ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করছে, যা ভারতের অভ্যন্তরে শান্তি ও সহাবস্থানের পরিবেশকে বিনষ্ট করছে। এই বিদ্বেষের ফলস্বরূপ, ভারতের মুসলমানরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনা, অপমান, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তাদের জীবনও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ভারতের মুসলিমদের প্রতি ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও সহিংসতার চিত্র উঠে এসেছে। গবাদি পশু রক্ষা বা তথাকথিত লাভ জিহাদের মতো অজুহাতে মুসলিমদের উপর হামলা ও হত্যার ঘটনা সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিমদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সম্পত্তির উপর আক্রমণ, নারীদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণের চেষ্টা ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করে তুলেছে।
বিশ্ব শান্তির উপর এহার প্রভাবঃ ভারতের এই ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিদ্বেষ শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়, এটি বিশ্ব শান্তির জন্যও একটি উদ্বেগের কারণ। একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক ও বহুসংস্কৃতির দেশ হিসেবে ভারতের এই ধরনের আচরণ অন্যান্য দেশেও ধর্মীয় বিভেদ ও সংঘাতকে উৎসাহিত করতে পারে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক অবনতির দিকে যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বের ঘৃণিত দেশগুলোর তালিকায় ভারতের দশম স্থানে উঠে আসা দেশটির ক্রমবর্ধমান ধর্মীয় উত্তেজনা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনেরই প্রতিফলন। এই তালিকায় চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর সাথে ভারতের নাম যুক্ত হওয়া বিশ্ব মঞ্চে দেশটির ভাবমূর্তির চরম অবনতিকেই নির্দেশ করে।
খ্যাতিমান মার্কিন অধ্যাপক ও গণহত্যা বিষয়ক গবেষক ড. গ্রেগরি স্ট্যান্টন ভারতের মুসলমানদের রুয়ান্ডার মতো গণহত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। নোয়াম চমস্কির মতো প্রখ্যাত দার্শনিক মনে করেন, ভারত সরকার মুসলমানদের বিশ্বের বৃহত্তম নিপীড়িত জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে। তাদের এই উদ্বেগ ভারতের পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা স্পষ্ট করে তোলে।
ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী যেভাবে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সংখ্যালঘুদের দমন করছে, তা দেশটির সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলির পরিপন্থী। এই দমনমূলক নীতি শুধু ভারতের মুসলিমদের জন্যই হুমকি নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের জন্যও উদ্বেগের কারণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট্ ও সম্প্রীতির ঐতিহ্যঃ মুসলিম ও হিন্দুদের অবস্থান ছিল সহমর্মিতা ও অভেদ্য মিলন বন্ধন এবং একত্রে ঐক্যের শামিল, যাহা ঐতিহাসিকভাবে ভারত হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র হিসেবে আখ্যায়িত ছিল। দীর্ঘকাল ধরে এই দুই সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেছে এবং একে অপরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের অবদান অনস্বীকার্য। মধ্যযুগে মুসলিম শাসকদের অধীনে ভারত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, চিত্রকলা ও সঙ্গীতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিমদের অবদান ভারতের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
আল্লামা ইকবালের বিখ্যাত কবিতা “সারা জাঁহাসে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা” আজও ভারতীয়দের মধ্যে দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই কবিতা ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির বার্তাই বহন করে। তবে বর্তমানের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতি ভারতের সেই ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির চেতনাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর এহার প্রভাবঃ ভারতের হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ শুধু দেশটির অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোর উপরও পড়ছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য ও বিদ্বেষপূর্ণ কার্যকলাপ দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করার মতো ঘৃণ্য কাজও তারা করেছে। এই ধরনের আচরণ দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
সর্বপরি গভীর অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ পূর্বক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে প্রমাণ হিসাবে প্রতিনিয়ত ঘটমান চিত্রে উঠে আসছে, ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর মুসলিম বিদ্বেষ একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই বিদ্বেষ শুধু ভারতের মুসলিমদের জীবন ও নিরাপত্তা বিপন্ন করছে না, এটি বিশ্ব শান্তির জন্যও একটি বড় হুমকি। ভারতের সরকার ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের এই বিদ্বেষপূর্ণ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং দেশটির বহুত্ববাদী ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির চেতনাকে পুনরুদ্ধার করা জরুরি। বিশ্ব সম্প্রদায়কেও ভারতের এই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা এবং শান্তি ও সহাবস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, এই বিদ্বেষের আগুন শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং মানবতাকে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আল্লাহ্ আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন এবং শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অনুধাবন করে তা জীবনে বাস্তবায়নের তৌফিক দান করুন।