ভারত কর্তৃক নৌ ট্রানজিট বন্ধ: দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হুমকিতে, আকাশপথে বিকল্প সন্ধানে বাংলাদেশ
প্রধান বার্তা সম্পাদক- জাহারুল ইসলাম জীবন।
গত ৫ই আগস্ট-২০২৪ ইং তারিখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত সরকারের বিতর্কিত পদক্ষেপের জেরে দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই ভারত একের পর এক আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৮ই এপ্রিল-২০২৫ ইং তারিখে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্ত নৌপথে পণ্য পরিবহনের ট্রানজিট সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে নৌ ট্রানজিট চুক্তি অনুযায়ী, দুটি দেশ একে অপরের জলপথ ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহন করতে পারে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে আসে, তেমনি বাণিজ্যের গতিও বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে এই সুবিধার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি এবং রপ্তানি করে আসছে। কিন্তু ভারতের এই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
ভারতের এই একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে গত ৮ই এপ্রিল-২০২৫ ইং তারিখ রাত দশটায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন সচিবালয়ে এক জরুরি সভায় মিলিত হন। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যবাহী জাহাজ মালিক সমিতি ও আমদানি রপ্তানিকারকগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় ভারত সরকারের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক নৌ ট্রানজিট সুবিধা সংক্রান্ত আইনের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করা হয় এবং অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখার জন্য বিকল্প পথের সন্ধান করছে। প্রাথমিকভাবে আকাশপথে বিমানের মাধ্যমে জরুরি পণ্য পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা গভীর উদ্বেগে রয়েছেন।
সভায় ভারত সরকারের প্রতি নমনীয় হওয়ার এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে, দু’দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে ভিসা আদান-প্রদান এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তিগুলিকেও স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিকিৎসা, ভ্রমণ এবং সাধারণ মানুষের ভিসাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
ভারতের এই আকস্মিক পদক্ষেপ শুধু বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা না গেলে উভয় দেশকেই দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হয় এবং ভারত শেষ পর্যন্ত তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কিনা।