আশিক চৌধুরী-র কর্মদক্ষতা ও দেশবদলের স্বপ্নে মুগ্ধ দেশ, নেগেটিভ মননে প্রশ্ন - আসল না নকল?
প্রধান বার্তা সম্পাদক ; জাহারুল ইসলাম জীবন এর সম্পাদনায় লেখা বিশেষ প্রতিবেদন।
"আশিক চৌধুরী" - এই নামটি এখন দেশের সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কর্মদক্ষতা, আকর্ষণীয় উপস্থাপনা এবং দেশপ্রেমের স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত—সবার মন জয় করে নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে চায়ের আড্ডা পর্যন্ত, সর্বত্রই তার প্রশংসার জোয়ার।
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আশিক চৌধুরীর তথ্যবহুল ভিডিওগুলো দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে নতুন করে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। যেখানেই ভিডিওগুলো শেয়ার হচ্ছে, সেখানেই প্রশংসার বন্যা। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করছেন, এতদিন এই প্রতিভাবান ব্যক্তি কোথায় ছিলেন এবং কেন তাকে আগে কাজে লাগানো হয়নি।
আশিক চৌধুরীর উত্থান নাটকীয়। সিঙ্গাপুরের এইচএসবিসির মতো বহুজাতিক ব্যাংকের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে, প্রধান উপদেষ্টার একটি মাত্র ৫৯ সেকেন্ডের ফোনকলে সাড়া দিয়ে তিনি ছুটে এসেছেন দেশের সেবায়। এখন তিনি শুধু বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান নন, একইসাথে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা)-রও নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা লাভ করেছেন, যা তার কর্মদক্ষতার সুস্পষ্ট স্বীকৃতি।
চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া আশিক চৌধুরীর বেড়ে ওঠা যশোরে। মেধাবী ছাত্র হিসেবে সিলেট ক্যাডেট কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে সাফল্যের সাথে শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। যুক্তরাজ্যে স্কাইডাইভিংয়ের মতো দুঃসাহসিক কাজের মাধ্যমে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নিজের নাম লিখিয়েছেন, ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন।
তবে আশিক চৌধুরীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তার হাত ধরেই বাংলাদেশে এসেছে স্টারলিংকের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, নাসা’র সাথে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, যার ফলস্বরূপ একটি বিদেশি ব্যাংক এই বছরই ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও, পাঁচটি বিশাল মালবাহী জাহাজ ক্রয়, রিভার ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা এবং চারটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপনের মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী (Ambitious) উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ইলেকট্রনিক বা বুলেট ট্রেন চালুর জন্যেও তিনি বিদেশি বিনিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই ১০টি বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
এই অভাবনীয় কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতিস্বরূপ সামাজিক মাধ্যমে আশিক চৌধুরী প্রশংসার শিখরে পৌঁছেছেন। সাধারণ মানুষ তাকে ‘আসল নায়ক’ হিসেবে অভিহিত করছেন। মঞ্জুর হোসেন অয়ন নামক একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "এই লোকটা ড. ইউনূসের থেকেও বড় খেলোয়াড়। দেশ যদি কোনোদিন আমূল বদলে যায়, তোমরা আশিক চৌধুরীর নামটা উচ্চারণ করতে ভুলো না। বিডা এবং বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক যে কতটা শক্ত খেলোয়াড় তা টের পাবা মাস ছয়েক পরেই। এই ছেলেটি ওয়েস্টার্নের আরাম-আয়েশের জীবন ছেড়ে দেশে এসেছে টাকা কামানোর জন্য না, দেশ বদলে দেওয়ার জন্য। তাকে একটা সুযোগ এবং সাপোর্ট দাও প্লিজ।"
সোহেল রানা নামের আরেকজন তার একটি প্রেজেন্টেশনের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, "সরকারের খুব ভালো একটা রিক্রুটমেন্ট হচ্ছে আশিক চৌধুরী। শেষ কবে এমন একজন স্মার্ট, জ্ঞানসম্পন্ন লোক সরকারে দেখেছি মনে করতে পারছি না। বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে এ রকম আরও অনেক আশিক দরকার। তাহলে দেশটা একদিন এগিয়ে যাবে।"
তবে এই সর্বব্যাপী প্রশংসার মাঝেও কিছু নেগেটিভ মাইন্ড (নেতিবাচক মানসিকতা- Negative Mindset )- এর মানুষ গুলো প্রশ্ন তুলছেন আশিক চৌধুরীর পরিচয় এবং উদ্দেশ্য নিয়ে। তাদের মনে সন্দেহ, এত অল্প সময়ে এত বেশি কাজ কীভাবে সম্ভব? কেউ কেউ তাকে ‘নকল’ বলেও অভিহিত করছেন। তাদের এই সন্দেহ অমূলক নয়। কারণ, এর আগে অনেক ক্ষেত্রেই এমন উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখানো ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত হতাশ করেছেন। তাই কিছু মানুষ এখনই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে তার কার্যক্রমের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
আশিক চৌধুরী অবশ্য তার ফেসবুক পোস্টে এই সমালোচনাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন। তিনি লিখেছেন, "সরকারি চাকরির আজকে এক মাস হলো। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এক দুপুরে প্রফেসর ইউনূস হঠাৎ ফোন করে বললেন, ‘আশিক, দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া গেছে। আসবা নাকি?’ আমি আমার স্ত্রী নন্দিনীকে জিজ্ঞেস না করেই রাজি হয়ে গেলাম। জানতাম ও কোনোদিন মানা করবে না, সুতরাং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর ইউনুস স্যারের মাত্র ৫৯ সেকেন্ডের এক হোয়াটসঅ্যাপ কলে আমার সিঙ্গাপুরের বিলাসী বহুল জীবনযাপন ছেড়ে দেশের পথে রওনা দিলাম বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে, বন্ধুদের ভাষায় বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার হিসেবে।"
তিনি আরও লিখেছেন, গত এক মাসে দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সমালোচনাকে বাকস্বাধীনতা হিসেবেই দেখছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস, ভুল করেও সুযোগ পেলে তিনি তা শুধরে নেবেন এবং বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সঠিক পথে হাঁটবে।
আশিক চৌধুরীর কর্মপরিকল্পনা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। তিনি ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যা দেশের তিন কোটি মানুষের জীবন পরিবর্তন এবং এক লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। তার গৃহীত উদ্যোগগুলো যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশ সত্যিই সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো উন্নত দেশে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না।
তবে, যেকোনো নতুন উদ্যোগ এবং ব্যক্তির ক্ষেত্রেই সমালোচনা থাকা স্বাভাবিক। আশিক চৌধুরীর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখন দেখার বিষয়, সময়ের পরীক্ষায় তিনি কতটা উত্তীর্ণ হতে পারেন এবং তার দেশবদলের স্বপ্ন কতটা বাস্তব রূপ লাভ করে। তবে আপাতত, তার কর্মোদ্যম এবং স্পষ্ট ভিশন দেশের সাধারণ মানুষকে এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।