রাফা ও গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনঃ
কেঁড়ে নিল আশ্রয়হীন ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল টুকু সহ সর্বশেষ প্রাণের স্পন্দন!
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার– জাহারুল ইসলাম জীবন।
বর্বরতা আর অমানবিকতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইহুদিবাদী ইসরায়েল এবং তাদের মিত্ররা গাজা ও রাফার আশ্রয়হীন, ক্ষুধার্ত নিরীহ ফিলিস্তিনি জনগণের সর্বশেষ প্রাণের স্পন্দন সহ আশ্রয়স্থলটুকুও কেঁড়ে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বিশ্ব বিবেকের আর্তনাদকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ইসরায়েলি বাহিনী একের পর এক ধ্বংসাত্মক বোমা হামলা চালিয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে চরম অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সর্বশেষ হামলায়, ইসরায়েল কে রক্ষা করার নামে সমর কৌশলের নামে চতুর্মাত্রিক ধ্বংসযজ্ঞ ও বৃষ্টির মতো গ্যাসীয় বোমা বর্ষণের মাধ্যমে অসংখ্য নিরীহ মানুষের সর্বশেষ প্রাণের স্পন্দন নিশ্বাস ও আশ্রয়টুকুও কেঁড়ে নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা এবং পরবর্তীতে রাফাতে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা খাদ্য, জল, চিকিৎসা ও বাসস্থানের তীব্র সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছিল। সামান্যতম নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার আশায় তারা যখন দিন গুনছিল, ঠিক তখনই ইসরায়েলি হায়েনারা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি হারানো, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত নারী, পুরুষ ও শিশুরা ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে পাখি মতো আকাশে উড়তেও দেখা গেছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও ইসরায়েলি হামলায় রেহাই পায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো বোমা পড়ছে। গ্যাসীয় অস্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। রাস্তায় পড়ে আছে সারি সারি নিথর দেহ, যাদের শেষকৃত্য করারও কেউ নেই। আহতদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে, কিন্তু তাদের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ সহ স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নেই।
এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড বিশ্ব মানবতার মুখে এক কঠিন চপেটাঘাত। অতীতের মতোই, বিশ্ব বিবেক যেন অসহায় দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
নামমাত্র দূর্বল নতজানু ও গোপন সম্মর্থনের কিছু কারণ হেতুঃ
** জাতিসংঘের গোপন পক্ষপাতীত্বের নামমাত্র নতজানু দুর্বল বিবৃতি।
** মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর মুসলিম দেশগুলোর রাজতন্ত্র, একক রাষ্টক্ষমতা নিজেদের আয়ত্তে ধরে রাখা সহ আধুনিক জীবনযাপনের ভোগবিলাসীতায় মত্ত থাকার জন্য সীমাহীন চামচামি আর লেজুড়েবৃত্তির চিরোচারিত নীতিতে নিরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে থাকা।
** আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর শুধুমাত্র দূর্বল মৌখিক নিন্দা ও বিবৃতি সহ নতজানু উদ্বেগ প্রকাশ।
এই সকল নতজানু ও পক্ষপাতিত্বের কারণে-ই ইসরায়েলের এমন সীমাহীন বর্বরচিত মানবতা বিরোধী গণহত্যা সহ ধ্বংসাত্মক আগ্রাসন থামাতে কিছুই যেন কাজে আসছে না। বরং, ইসরায়েল ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে বিশ্ব দরবারে আরও ভয়াবহ করে তুলছে যাহা আন্তর্জাতিক মহলের সমর সামরিক বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এই পরিস্থিতি যদি এইভাবেই চলতে থাকে, তাহলে হয়তোবা এহেন পরিস্থিতি হেতু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুতিকাগার হিসেবে ইসরাইল ও তাহার দোসর মিত্র দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যের এ-ই চরম উত্তেজনা কর পরিস্থিতি তৈরি করনের জন্য ভবিষ্যৎ ইতিহাসে বিশ্ব দরবারে দায়ী থাকিবে।
ফিলিস্তিনিদের ওপর এই নৃশংস হামলা শুধু একটি ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা নয়, এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। আশ্রয়হীন, নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের নীরবতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের অভাব ইসরায়েলকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
গাজা ও রাফার আকাশ এখন শুধুই প্রাণঘাতী ধ্বংসের বিষাক্ত ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না, স্বজনহারা মানুষের আর্তনাদ আর বোমার বিকট শব্দ মিলেমিশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ইসরায়েলের এই বর্বরতা বন্ধের জন্য আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। একইসাথে, ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পাঠানোরও দাবি উঠেছে।
তবে প্রশ্ন একটাই – আর কত ধ্বংসযজ্ঞ ও নিরীহ প্রাণের বিনিময়ে বিশ্ব বিবেক জেগে উঠবে? আর কতদিন এই অমানবিকতা চলবে? ফিলিস্তিনের আকাশ কি কখনো শান্ত হবে? আশ্রয়হীন মানুষগুলো কি কখনো নিরাপদে ঘুমাতে পারবে? ফিলিস্তিন কি স্বাধীন দেশ ও স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ স্বাদ গ্রহন করতে পারবে?- এই প্রশ্নের উত্তর আজ বিশ্ব মানবতা ও আত্মবিবেকের কাছে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে!